আসফাকুজ্জামান লিখন। একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা। ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি এতো ছোট বয়স থেকেই এই তরুণ নিজের নামের পাশে গড়ে নিচ্ছে পরিচয়। নিজের হাত খরচটা এখন আর তার বাসা থেকে নিতে হচ্ছে না। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলছে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে। সাহসী এই তরুণ উদ্যোক্তা লিখনের গল্প পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
পারফিউম ওয়েল দিয়ে লিখনের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে পারফিউম ওয়েল এবং পারফিউম কালেকশন নামে সুগন্ধি আইটেম নিয়ে অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্যা পরিচালনা করছে ছোট্ট এই তরুণ উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার সেই যাত্রা এবং গল্পটা শুনতে চাইলে লিখন ‘নয়াকণ্ঠ’কে বলেন, ছোট থেকে এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ, পারফিউম এবং সুগ্নন্ধি নিয়ে নতুন কিছু তৈরি করার খুব শখ ছিলো। নতুন কিছুর সাথে পরিচিত হতে আমার খুবই ভালো লাগে। তখন এই সব দেখে আম্মু আমাকে অনেক উৎসাহ দিতো। আম্মু বলতো যেহেতু তোর এগুলো পছন্দ তাহলে তুই এটাকে কাজে লাগাতে পারিস। সেই ভাবনা থেকেই আমার এই শখের কাজ দিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথচলা শুরু।
পরিবারই আমার ইন্সপিরেশন। পরিবার ছাড়া আমার এসব করা সম্ভব ছিলো না। আমি স্টুডেন্ট, আমার কাছে এত টাকা-পয়সা থাকে না। আমার পরিবার আমাকে ইকোনমিক ও মেন্টাল সাপোর্ট দিয়েছে সবসময়। এমনকি আমাকে আরও বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা সাপোর্ট লাগে তারা দিয়ে যাচ্ছে।
আমার এই উদ্যোগটা খুব ছোট হলেও এবং বয়স কম হলেও আলহামদুলিল্লাহ অল্প সময়ে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। আমার বর্তমানের হাত খরচ আমি উঠিয়ে নিতে পারছি।
লিখন মনে করেন প্রত্যক এর কিছু না কিছু করা দরকার। স্বাবলম্বী মানে এই না যে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করতে হবে। লিখন মনে করেন ইনকাম হবে, সেটা যেকোনো বিপদে নিজের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হওয়া যায়। যাতে কখনো কারো বোঝা না হয়ে থাকতে হয়।
লিখন জানায়, নিজের ছোট ইনকামের মধ্য থেকে পরিবারের জন্য কিছু করতে পারায় এক আলাদা প্রশান্তি পাওয়া যায়। তাই তার ইচ্ছা আছে পড়ালেখার পাশাপাশি এই উদ্যোগকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কাজেও নিয়োজিত লিখন। সেই সম্পর্কে তরুণ আসফাকুজ্জামান লিখন বলেন, ‘আমি সামাজিক কাজে নিয়োজিত আছি। আমরা সবাই একটা পৃথিবীতে থাকি। পৃথিবীতে রয়েছেন অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মুখের হাসি আমার কাছে খুবই দামি। দুনিয়াতে সবাই চিরদিন বেঁচে থাকবে না। তাই তাদের জন্য কিছু করতে পারাটা আমার সৌভাগ্য বলে মনে করি। সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও শিশুদের সাথে সময় কাটাতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাদেরকে সম্মান ও ভালোবাসা দিয়ে, তাদের সাথে সময় কাটিয়েও তাদের মুখে হাসি ফোটানো যায়। তার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয় না।’
লিখন বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত রক্তদান করা, বন্যায় ত্রাণ দেয়া, সুবিধাবঞ্চিতদের ত্রাণ দেয়া থেকে শুরু করে টিউবওয়েল, খাবার ও জামা কাপড়, পথ শিশুদের জামা কাপড়-খাবার, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে খাবার, জামা কাপড় দেয়া ও রোজার মধ্যে তাদেরকে কিছু করে দেয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডোনেশন কালেক্ট করেছি। করোনার সময় যা যা দরকার ছিল, তা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি এ সব কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম।’
লিখন আরও বলেন, ‘আমার সামর্থের মধ্যে সবসময় চেষ্টা করি তাদের জন্য কিছু করার। আল্লাহ যেন আমাকে সামর্থ্য দেয় তাদের জন্য আরও কিছু করার। আর এভাবেই সারাজীবন যেন তাদের জন্য করতে পারি আমি এবং তাদের জন্য আরও কিছু করতে পারি এটাই আমার চাওয়া।’
লিখন জানায়, ‘আমাদের সবারই সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তাদেরকে সম্মান করা উচিত। তাদেরকে ভালোবাসা উচিত। ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা পাওয়া যায়, সম্মান দিলে সম্মান পাওয়া যায়।’
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দ্যেশে লিখন বলেন, ‘এই সব কাজে মাধ্যমে আমরাও পারব পরিবারের পাশে দাঁড়াতে, সমাজের পাশে দাঁড়াতে, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। আমরা সবাইকে সম্মান দিলে সম্মান ফিরে পাবো, ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা পাবো। আমরা চাইলে আমাদের দেশকে উন্নত করতে পারবো। তাই মনে সাহস যুগিয়ে গন্ডি থেকে নিজেকে বেরিয়ে আনতে হবে। নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে হবে। কারো উপর নির্ভর না হয়ে নিজেকে সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। ধৈর্য্য, সততা, নিষ্ঠা, এবং অধ্যাবসায়ের সাথে কাজে লেগে থাকতে হবে।’
সুগন্ধি আইটেম দিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে পারফিউম কালেকশন ও পারফিউম ওয়েল আইটেম নিয়ে অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্যা পরিচালনা করছে ছোট্ট এই তরুণ উদ্যোক্তা আসফাকুজ্জামান লিখন।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার সেই যাত্রা এবং গল্পটা জানিয়ে লিখন ‘নয়াকণ্ঠ’কে বলেন, ‘চলার পথে অনেক বাধা আসবে। অনেককেই পাশে পাবেন। আবার অনেককেই পথচলার ক্ষেত্রে পাশে পাবেন না। এতে ভেঙে পড়লে চলবে না। থেমে যাওয়া যাবে না। সাহসিকতার সাথে সবসময় এগিয়ে চলতে হবে।’