সিরাজগঞ্জ সদরের খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের হাট বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি শূন্য পদে পরীক্ষার আগেই কাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অন্য প্রার্থীরা। মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে এ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। এছাড়াও এ ঘটনায় এলাকায় লিফলেট আকারে উড়ো চিঠিও পাঠিয়েছেন কে বা কারা।
হাট বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী চূড়ান্তের অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পাঁচজন চাকরি প্রার্থী। তারা ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন।
এদিকে আগামীকাল শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে তার আগের দিন শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে প্রতিষ্ঠানে মিটিংয়ে বসে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি। সেখানে আলোচনা করে আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, তিনি নিয়োগ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন।
শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি নয়াকন্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে একাধিক চাকরি প্রার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামীকাল শনিবার হাট বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। দুদিন আগে এ পদ দুটিতে আবেদনকারীদের পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়, কিন্তু তারিখ ব্যবহার করা হয় ২৩ ডিসেম্বর। কিন্তু এর আগেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের হয়ে সহকারী শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম নৈশপ্রহরী পদে আনিছারের ছেলে মো. উজ্জ্বল হোসেন ও আয়া পদে জিয়ার স্ত্রী সাথী খাতুন নামে দুজনের কাছে থেকে মোটা টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি ওই দুই প্রার্থীর ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান তারা।
অভিযোগ সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাইয়ের ৯তারিখে হাটবয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে দুটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। পরে নৈশপ্রহরী পদে ৭ জন ও আয়া পদে ৮ জন পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে পদ দুটিতে নিয়োগের জন্য ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে গত বুধবার অনেকটা হুট করেই ৩০ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের কথা জানানো হয়।
চাকরি প্রত্যাশী নাইম আহমেদ ও রিমন হোসেন নয়াকন্ঠকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ আগে এলাকাবাসীর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি জানাজানি হয়। সহকারী শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ফরিদ দুটি পদে দুজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন বলে সকলের মধ্যে জানাজানি হয়। এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার আমরা ৫ জন চাকরি প্রত্যাশী ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি তদন্তের ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে আবেদন করি।
অভিযোগ করা বাকি তিন চাকরি প্রার্থী হলেন- শান্তি রেজা, কায়ফা ও মো. ছাকমান আলী।
এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য। কেউ কেউ এর প্রতিবাদও করেছেন। কোনো সদস্য আবার বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য গোলাম মওলা নয়াকন্ঠকে বলেন, তারা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে মিটিং ডেকেছিল। মিটিংয়ে কথা কাটাকাটি হওয়ায় মিটিং অসমাপ্ত রয়েছে। সেখানে নিয়োগের বিষয়ে কোনো কিছু চূড়ান্তও হয়নি। যেহেতু মিটিংয়ের শুরুতেই সবার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল, তাই হয়তো পরে সেই মিটিংয়ের উপস্থিতি স্বাক্ষর রেজুলেশনে দেখিয়ে নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিয়োগের বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির পাঁচজন সদস্যের কোনো মতামত গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি আমি জানিও না যে শনিবার নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা।
জানা যায়, মিটিংযে অস্বচ্ছ নিয়োগ না দিয়ে তার প্রতিবাদ জানিয়ে স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রেজাউল করিম মুন্সি। তিনি নয়াকন্ঠকে বলেন, সবকিছুই স্বচ্ছতার সাথে হওয়া উচিত, অস্বচ্ছ কোনো কিছুই শুভ হয় না। এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে যে, তারা টাকা নিয়ে কাদেরকে নিয়োগ দেবে, এটা হতে পারে না। আমার কথা নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে, যোগ্যতার ভিত্তিতে যারা টিকবে তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হবে।
এদিকে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম। তিনি মুঠোফোনে বলেন, কিছু লোক হিংসা বা শত্রুতা করে আমার বিরুদ্ধে এগুলো রটিয়েছে। এ সকল কোনো অভিযোগই সত্য নয়।
অভিযোগের বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়া হচ্ছে- এমন অভিযোগ সত্য নয়। এরপরও আজ (শুক্রবার) সকালে সবাই বসে নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনজুর রহমান বকুল বলেন, পাতানো নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এটা সত্য নয়। এরপরও কাউকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনেক বড় বড় ব্যক্তির সুপারিশ থাকে। তাছাড়াও অভিযোগ ওঠায় আমরা নিয়োগ স্থগিত করেছি। তবে যখন নিয়োগ দেওয়া হবে তখন শতভাগ স্বচ্ছতার সাথেই দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এলিজা সুলতানা বলেন, যেহেতু অভিযোগ এসেছে তাই আমি নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়াও অভিযোগটি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ নয়াকন্ঠকে বলেন, পরীক্ষা হলো না, রেজাল্ট হলো না আগেই কারা চাকরি পাবে তাদের নাম কনফার্ম হয়ে গেল- এটা কেমন কথা। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও বিষয়টি আমাকে এখনো জানানো হয়নি।