শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক যুক্তরাষ্ট্র এক বছরে ২ লাখ ৭০ হাজার অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছে জাতি নতুন করে বিজয় দিবস উদযাপন করবে আজ দেশকে আরও উন্নত ও স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর : প্রধান উপদেষ্টা মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি আশা করি দ্রুত জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে : মির্জা ফখরুল শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে জাতীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু ১০ এপ্রিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতীয় কর্মসূচি মিথ্যা-প্রতিহিংসামূলক মামলা আদালতের মাধ্যমে শেষ হলে ফিরবেন তারেক রহমান : মির্জা ফখরুল

স্বাধীন বিচার বিভাগ ও শক্তিশালী সংসদ দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট
আপডেট : শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৪:২৭ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, শক্তিশালী সংসদ ও প্রশাসন একটি দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে।
তিনি বলেন, “ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করে সম্পূর্ণ স্বাধীন করেছি, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সাউথ এশিয়ান কনস্টিটিউশনাল কোর্টস ইন দ্যা টুয়েন্টি-র্ফাস্ট সেঞ্চুরি: লেসন্স ফ্রম বাংলাদেশ এন্ড ইন্ডিয়া’ শীর্ষক দু’দিন ব্যাপী সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
উচ্চ আদালতের রায়ে সামরিক শাসন এবং সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দখলকে অবৈধ হিসেবে রায় দেয়ার প্রসংগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর যখন এই রায় এলো সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আবার গণতন্ত্রকে সুসংহত করি। আমাদের সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদ যেখানে বলা আছে যে ‘এই প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ’ সেখানে আরেকটি অনুচ্ছেদ আমরা যুক্ত করে এই উচ্চ আদালতের রায় অনুসারেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি যে অপরাধি এবং সেটা যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সেটা আমরা সংযুক্ত করি। এর মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আমরা আইন পাশ করেছি। এই নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। তাকে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। বাজেটেও তাদের জন্য পৃথক বরাদ্দ দিয়েছি। এমনকি আগে বিচার বিভাগও আর্থিকভাবে নির্ভরশীল ছিল সরকারের ওপর। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর বিচার বিভাগকেও সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করে দিয়ে সবক্ষেত্রেই তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। আমরা এই বিষয়টা বিশ^াস করি বলেই আমরা সেটা করতে পেরেছি, আওয়ামী লীগ সরকার করতে পেরেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেমন আমরা নিশ্চিত করেছি তেমনি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন কমিশনকেও স্বাধীন করে দিয়েছি। যাতে তাঁরা আমাদের দেশের মানুষের অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে পারে।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং ভারতের প্রধান বিচারপতি ড. ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় বক্তৃতা করেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়তুর রহিম স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘদিন ক্ষমতা জনগণের হাতে ছিলনা, ক্যান্টনমেেেন্টই বন্দি ছিল, এটাই হলো বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই সুপ্রীম কোর্টকে কেননা তাঁরা যে আদেশটা দিয়েছিল সেটাই আমাদের বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়। দুর্ভাগ্যক্রমে প্রায় ২১ বছর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতা মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতেই কুক্ষিগত ছিল।
সরকার প্রধান বলেন, মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে একটা মামলা ছিল। মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ঐ মালিকানাটা দেয়া হয়েছিল অন্য কাউকে। যেটা নিয়ে আদালতে বিচার হয়। সেই বিচারের রায় দিতে গিয়েই সুপ্রিম কোর্ট এই মার্শাল ল’কে অবৈধ ঘোষণা করে। শুধু তাই নয় সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দখল যে সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক এবং অসাংবিধানিক ও অনির্বাচিত কেউ সরকারে থাকতে পারেনা, এটা যে অবৈধ সেই ঘোষণাই জারি হয়। সেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নি:শ^াস ফেলার সুযোগ করে দেয়। তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার সুযোগ এনে দেয়। আর এর মাধ্যমেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় এসে প্রথমেই রাজনীতিবিদদের গালি-গালাজ করেছে। এরপর নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে, উর্দ্দী ছেড়ে রাজনিতিবিদ সেজে দল গঠন করে নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার জন্য সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এসে সেই অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার প্রয়াস পেয়েছে। সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী এভাবেই তৈরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের উচ্চ আদালতকে, কৃতজ্ঞতা জানাই সে সব জজ সাহেবদের যাঁরা রায় দিয়েছিলেন সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দখল ও মার্শাল ল’ জারি অবৈধ। আপনারা যদি ২০০৯ থেকে এপর্যন্ত হিসেব করেন আজ দেশের যে আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে সেটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত এবং একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে মানুষের জীবনে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি, আর্থসামাজিক উন্নতি একমাত্র হতে পারে যখন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ হয়।
‘দেশে একটি গণতান্ত্রিক ধারা বা পরিবেশ ছাড়া কখনও কোন দেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি সম্ভব নয়,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতবাসী সেদিক থেকে সত্যিই সৌভাগ্যবান যে তাদের দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র চলেছে। হয়তো সরকার পরিবর্তন হয়েছে এবং বিরোধী মতালম্বীরাও রয়েছেন কিন্তু গণতন্ত্র কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের জীবনেতো এসেছে অমানিষার অন্ধকার। পাকিস্তান আমলে যে স্বৈরশাসন বলবৎ ছিল তা আবার ’৭৫ এর পরে টানা ২১ বছর স্বাধীন বাংলাদেশেও চলেছে।
তিনি মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকেও এ সময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে আমাদের ৯শ’ জনের অধিক বিচারক ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ায় ভারত সরকার এবং ভারতের সুপ্রীম কোর্টকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, ভারতের সুপ্রীম কোর্ট আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সাংবিধানিক মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে বিভিন্ন কালজয়ী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশ একই আইনের ও আইনী দর্শনের উত্তরাধিকারী হওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্তসমূহ আমাদের উচ্চ আদালত দৃষ্টান্ত/রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করার নজির আছে। তাছাড়া, কমন-ল কান্ট্রিজ হওয়ার সুবাদে যেকোন দেশ যে কারও রায়কে প্রিসিডেন্স হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ^াস করি, এ ধরনের কনফারেন্স আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের সাথে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের মিথষ্ক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে। আইনী জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ সমৃদ্ধ হবেন। ফলে দু’দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় আরোহণ করবে।
তিনি বলেন,‘আমি মনে করি এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে উন্নত বিচার প্রশাসন বিনির্মাণে দু’দেশের মধ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে’।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর