রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দখল ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গত সোমবার রাত ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়, যা এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে। সংঘর্ষের সময় অনেকের হাতেই দেশীয় ও ধারাল অস্ত্র দেখা গেছে।
জানা যায় এ ঘটনায় তিন জন গুরুতর আহত হয়েছেন তারা হলেন, সবজি ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী, ইয়াকুব আলী, ইউসুফ আলী।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তেজগাঁও থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জালাল আহমেদ, সদস্য সচিব জিএম জাহাঙ্গীর, কর্মী আনু, জাহিদ, সুমন, হাফিজসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা এসে জালাল আহমেদকে তেজগাঁও থানা পুলিশের জিম্মায় দিয়ে দেয়। তবে পরেরদিন শ্রমিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের রফাদফায় ও মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে তাকে নিয়ে আসা হয়। একই সঙ্গে মামলা না করার জন্য ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হলে তারা মামলা থেকে সরে এসে অভিযুক্তদের বহিষ্কারসহ ন্যায্য বিচার দাবি করলে তাকে সাথে সাথে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারওয়ান বাজারের টিনশেড কাঁচামালের আড়ৎ ঘেঁষা পশ্চিম পাশের সড়কে কয়েক বছর ধরে রাতে সবজির ব্যবসা করে আসছেন ইদ্রিস আলী নামের এক ব্যবসায়ী। গত সোমবার রাতে হঠাৎ করে তেজগাঁও থানা শ্রমিক দল ও একই থানার ২৬ নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের এক-দেড়শ লোক এসে তার কাছে চাঁদা দাবি করে তাকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুই পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা মারামারিতে গড়ায়। এরপর সেখান থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ নামে আক্রমণকারীদের একজনকে ঘিরে ধরে ফেলেন। এ সময় অন্যরা দৌড়ে পালিয়ে যান।
জানা যায়, জালাল আহমেদ তেজগাঁও শ্রমিকদলের আহ্বায়ক।
পরে ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির অভিযোগ জানিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ফোন করলে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
গণমাধ্যমকে ওই দিন রাতের ঘটনার বিস্তারিত জানান কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের আড়তের সামনের রাস্তায় রাতের বেলায় তারা কিছু সবজি রেখে তা রাতেই বিক্রি করেন। ওইদিন রাতে জালাল আহমেদ, জিএম জাহাঙ্গীর, আনু, সুমনসহ এক-দেড়শ লোক ছুরি, রড-লাঠি নিয়ে এসে চাঁদা দাবি করে তার ছেলে ইদ্রিসের কাছে। চাঁদা কেন দিতে হবে বললে তার সঙ্গে তাদের তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে তারা অতর্কিত হামলা করলে তার চার ছেলেসহ উভয় পক্ষের ১০ জনের মতো আহত হন। এরমধ্যে মাথা ফেটে ও হাত ভেঙে গুরুতর আহত হন তার চার ছেলে। তাদের একজন পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি। অন্য দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল থেকে।
ঘটনাস্থলের পাশেই রাস্তায় সবজির ব্যবসা করেন আসাদ নামের এক ব্যবসায়ী। নিজেকে বিএনপির কর্মী উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তেজগাঁও থানার শ্রমিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতারা এখানে এসে চাঁদা দাবি করছেন। রাজনীতি করলেও সবাই এখানকার ব্যবসায়ী। সবাই সবাইকে চেনেন। তারপরও চাঁদা দাবি করায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
তিনি বলেন, আক্রমণকারীরা দ্রুত সরে গেলেও জালাল আহমেদকে সবাই ধরে ফেলে। এরপর ছাত্রদের খবর দেওয়া হয়। ছাত্ররা আসার পর কয়েকজন ছাত্রকেও আঘাত করা হয়। তবে ছাত্ররা আসার পর ঘটনা আর বেশি দূর গড়ায়নি। তারা ফোন করলে পুলিশ এসে আটক জালালকে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জালাল আহমেদের দাবি, তিনি সেখানকার ব্যবসায়ী ও তেজগাঁও থানার শ্রমিক দলের আহ্বায়ক। তবে তিনি চাঁদাবাজির এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তেজগাঁও থানার সদস্য সচিব জিএম জাহাঙ্গীর ও তার অনুসারীরা ঝামেলা করতে আসলে তিনি উভয় পক্ষকে থামাতে যান। এক পর্যায়ে তাকে মেরে আহত করা হয়। পরে তাকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে আটকে রাখা হয়।
এ বিষয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, মারামারির পর ব্যবসায়ীরা যেসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন, তাদের মধ্যে জালাল আহমেদ, জাহাঙ্গীর, আনু, সুমন, হাফিজ, নাসিরসহ কয়েকজনের নাম বলা হয়েছে। ছাত্ররা চাঁদাবাজদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জালাল আহমেদকে কারো জিম্মায় না দিয়ে পুলিশকে খবর দেন।
জানা যায়, রাত প্রায় দেড়টার দিকে তেজগাঁও থানা থেকে পুলিশ এসে জালাল আহমেদকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরেরদিন অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কাজী শাহ আলম রাজার নির্দেশে যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বাবলু ও তেজগাঁও থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে তেজগাঁও থানা থেকে আটককৃত জালাল আহমেদকে মুক্ত করেন। একই সঙ্গে ওই সময় জালাল আহমেদকে তেজগাঁও থানার আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করে বিজ্ঞপ্তি দেয় ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কাজী শাহ আলম রাজা।
এ বিষয়ে মধ্যস্থতাকারী ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বাবলু বলেন, সবাই নিজেদের পরিচিত। তারেক রহমানের নির্দেশ কোথাও কোনো চাঁদাবাজি চলবে না। জালাল আহমদেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযুক্ত অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন বলেন, কেউ চাঁদাবাজ হিসেবে চিহ্নিত হলে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। কারওয়ান বাজারের ঘটনায় উভয় পক্ষ নিজেরা নিজেদের পরিচিত। তারা নিজেরা সমঝোতা করে মুচলেকা দেওয়ায় আটক জালালকে তাদের জিম্মায় মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।