ভূমিধসে শোকে স্তব্ধ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনি। গত শুক্রবার সেখানে ভূমিধসে মাটিচাপা পড়া মানুষের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে সোমবার জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২৭ মে) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাত্র ৬টি মরদেহ উদ্ধার করা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাকিরা মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। স্বভাবতই তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারি আর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। এসব মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও। পুরো দ্বীপরাষ্ট্রটিই এখন শোকে কাঁদছে।
তবে এরইমধ্যে অলৌকিক এক ঘটনা ঘটে গেছে সেখানে। মাটিচাপা পড়ার তিন দিন পর সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এক দম্পতিকে। তারা হলেন- জনসন ও জ্যাকলিন ইয়ানদাম। ফলে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দেশটিতে স্থানীয়দের মাঝে একদিকে শোক, অন্যদিকে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসির স্থানীয় প্রতিনিধিকে জ্যাকলিন বলেছেন, আমরা এখনও বেঁচে আছি এ জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। এটা আমাদের জন্য বর্ণনা করা কঠিন যে কীভাবে মাটির নিচে বেঁচে ছিলাম। আসলে আমাদের বেঁচে থাকা সত্যিই ‘অলৌকিক’ ঘটনা। আমরা বিশ্বাস করি একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশে আমরা একত্রে বেঁচে ফিরেছি।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে দেশটির ইঙ্গা প্রদেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বৃষ্টির পানিতে আরও জনপদ মাটিতে ঢেকে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে উদ্ধারকার্য ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর অবস্থা এতটাই দুর্গম হয়ে পড়েছে যে সেখানে উদ্ধার তৎপরতা বাড়াতে যেসব ভারী যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। দুর্ঘটনাকবলিত অঞ্চলে পৌঁছানোর একমাত্র বাহন হেলিকপ্টার। কারণ সেখানকার প্রধান সড়কগুলো ধসে পড়া মাটির চাপে ভেঙে গেছে। গত শুক্রবার ভূমিধসের পর এ পর্যন্ত মাত্র ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কয়েকশত মানুষ মাটিচাপা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হলেও এখনকার পরিসংখ্যান অনুযায়ী সে সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে সরকার। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এর আগে শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৩টার দিকে ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটে। তখন ওই গ্রামগুলোর অধিকাংশ মানুষই ঘুমিয়ে ছিলেন। ভূমিধসে ইয়াম্বলি গ্রামটি পুরোপুরি চাপা পড়েছে। এখানে প্রায় দোতলা সমান উঁচু মাটি ও আবর্জনার নিচে ১৫০টিরও বেশি বাড়ি চাপা পড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
উদ্ধারকর্মীরা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা মাটির নিচে থেকে আসা আর্তনাদের আওয়াজ পেয়েছেন।
জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, প্রথম উদ্ধারকারী দল রোববার বিকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ পর্যন্ত ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্রামটিতে অন্তত ৪ হাজার মানুষ বসবাস করত। তাদের বেশিরভাগই মাটির নিচে চাপা পড়েছে।