৫ কোটি ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ৮২০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট আত্নসাতের অভিযোগে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের (অবসরপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলা অনুমোদনের বিষয়টি জানিয়েছেন।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত বছরের ২৩ আগস্ট রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত থেকে মানিককে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরেরদিন সিলেটের বিচারিক হাকিম আলমগীর হোসেন বিচারপতি মানিককে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপরে পাসপোর্ট আইনে ভারতে ‘অনুপ্রবেশের চেষ্টা’র অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মানিকের বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় মামলা দায়ের করে।
অনুমোদিত প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিচারপতি হিসেবে কর্মরত থাকাকালে এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫ কোটি ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ৮২০ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাজউকের প্লট আত্মসাতের অভিযোগে দ্বিতীয় অনুমোদিত মামলায় বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (অবসরপ্রাপ্ত) সহ ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মানিক ছাড়াও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমিরি কামাল, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা, এম জয়নাল আবেদীন ভুইয়া এই মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া রাজউক কর্মকর্তা মো. আবু বক্কার সিকদার, এম মাহবুবুল আলম ও আব্দুল হাই আসামি হচ্ছেন মামলায়।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরষ্পর যোগসাজশে ‘‘The Dhaka Improvement Trust (Allotment of Lands) Rules, 1969’’ এর বিধি-৯ লঙ্ঘন করেছেন।
আসামিরা ক্ষমতার অপব্যহারের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয়ে মিথ্যা হলফনামা দাখিল করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে মূল বরাদ্দ গ্রহিতার নামে বরাদ্দ করা ১৮৮২০২ নং কোডের ১৬ নং সেক্টরের ১১৬ নং রাস্তার ০৩৬ নং প্লট বরাদ্দ প্রদান করে পরবর্তীতে লীজ দলিলের ২২ ও ২৩ নং শর্ত ভঙ্গ করে প্লট হস্তান্তর করার অনুমতি প্রদান করে প্লটটি আত্মসাত করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
১৯৭৮ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন জীবন শুরু করেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হন। ২০০১ সালে তাকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক করে নেয় সরকার। কিন্তু পরে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে তাকে বাদ দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর হাইকোর্টের একটি রায়ে বিচারকের আসনে ফেরেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ২০১৩ সালে তাকে পদোন্নতি দিয়ে আপিল বিভাগের বিচারক করা হয়।