‘টিআইবি’র দেওয়া কোটিপতির হিসাবে গরমিল আছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এই হিসাব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নাই’ বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্য ‘আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি প্রার্থী বেশি’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গ্রামেও এক কাঠা জমির দাম ২০ লাখ টাকা, ৫ কাঠা জমির দাম ১ কোটি টাকা। আর ঢাকা শহরে ১ কোটি টাকার নিচে কোথাও জমি নাই। চট্টগ্রাম শহরেও নাই। সুতরাং এই হিসাব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নাই। তাদের এই হিসাব ধরে যদি কোটিপতি গোনা হয় তাহলে সেই হিসাবে গরমিল আছে এবং সেটা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি’র খুব বড়গলা ছিলো, প্রচুর প্রেস কনফারেন্স করেছে, বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছে। পরে দেখা গেলো যে, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি তো হয়ই নাই, দুর্নীতি হওয়ার কোনো সুযোগও সৃষ্টি হয় নাই কারণ টাকা ছাড়া দুর্নীতি হয় কিভাবে! তারা নানা সময়ে নানা গবেষণা করে, পরে দেখা যায় সেগুলো আসলে গবেষণা নয়, কতগুলো রিপোর্ট। নিজেদের ইচ্ছামতো বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।’
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ‘জনগণ ও বিদেশিরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে’ মন্তব্যের জবাবে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে এখন নির্বাচনী উৎসাহ-উদ্দীপনা। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে। নির্বাচন যদি প্রত্যাখ্যান করতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা অবজারভার পাঠাতো না, ওআইসি, সার্কভুক্ত দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশ অবজারভার পাঠাতো না। তাদের ভোটে আগ্রহ আছে এবং এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে বিধায় তারা অবজারভার পাঠাচ্ছে। রুহুল কবির রিজভীসহ গুটিকয়েক নেতা হয়তো নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের কর্মী-সমর্থকরাও সবাই প্রত্যাখ্যান করে নাই, তাদের সমর্থকরা ভোট দিতে যাবে।’
রিজভীর অপর মন্তব্য ‘আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে দেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে যাবে’ এর জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। ভারতের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু আদায় করেছি। ১৯৭৪ সালে ভারতের সাথে আমাদের ছিটমহল বিনিময়ের চুক্তি হয়েছিলো, সেটি কার্যকর ছিলো না, সেটি শেখ হাসিনা কার্যকর করেছেন। আমরা আন্তর্জাতিক শালিসী আদালতে মামলা করে ভারতের কাছ থেকে বিপুল সমুদ্রসীমা আদায় করেছি। সমুদ্রে বাংলাদেশের প্রায় সমপরিমাণ একটি অঞ্চল আমাদের অধিকারে এসেছে।
ভারতের সাথে সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। সীমান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষের কোনো পরিচয় ছিলো না, তারা এখন পরিচয় পেয়েছে। শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভবপর হয়েছে। সমগ্র ভারতে এখন বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখা যায়। এভাবে বহুকিছু অর্জন হয়েছে। অঙ্গরাজ্য হলে তো বহু আগে হয়ে যেতো। উনারা ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগে বলেছিলো যে আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় গিয়েছিলো কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। বরং ভারতের কাছ থেকে আমরা কূটনৈতিকভাবে এবং সুসম্পর্কের মাধ্যমে বহুকিছু আদায় করেছি। অর্থাৎ এই সমস্ত দাওয়াই উনারা আগে ব্যবহার করেছিলেন তখন কিছুটা কাজ করতো এখন আর এই দাওয়াই কাজ করে না।’
এ দিন মতবিনিময়ের শুরুতে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগের সদ্যঘোষিত ইশতেহার নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। এবার আমাদের শ্লোগান হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। ইনশাআল্লাহ বরাবরের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেমন ইশতেহার বাস্তবায়ন করেছে, জনগণ যদি আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে, আমরা সরকার গঠন করতে পারি, এবারকার ইশতেহারও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হবে।
সিনেমা হল নির্মাণে হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল পর্যালোচনা
ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩:
দেশে নতুন সিনেমা হল নির্মাণ ও পুরনো হল সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ তহবিলের ব্যবহার পর্যালোচনা সভায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সিনেমা হল মালিক ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: হুমায়ুন কবীর খোন্দকার পরিচালিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মন্ত্রী এ তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণ উৎসাহিত করে বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকায় হল নির্মাণে ঋণের সুদ ৫ শতাংশ এবং অন্যত্র এই সুদের হার ৪.৫ শতাংশ। এতো স্বল্প সুদে আর কোনো বাণিজ্যিক ঋণ দেশে নেই। সিনিয়র সচিব হুমায়ুন কবীর জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০জন এই ঋণের জন্য আবেদন করেছে এবং আবেদনকারীদেরকে তাদের উদ্যোগের জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস জানান, তফসিলি ব্যাংকগুলো সিনেমা হলের মাধ্যমে অর্থ আদায়ে সংশয় প্রকাশ করলেও সত্য এই যে, বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে এ পর্যন্ত সিনেমা হল নির্মাণে ২৪৮টি ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে এবং একটি ছাড়া সবগুলোই পরিশোধিত। পাশাপাশি সরকার সিনেমা হলগুলো থেকে এ যাবৎ ৮৯১ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (চলচ্চিত্র) মো. কাউসার আহম্মদ, সিনেমা হল উদ্যোক্তা চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে সহসভাপতি আমির হামজা এবং এস এম মাসুদ পারভেজ, শামসুল আরেফিন, তাপস দাস গুপ্ত, রায়হান পরামাণিক, মুহাম্মদ বেলাল প্রমুখ সভায় অংশ নেন।