ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাশিয়ার যে কোনো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে ইউক্রেন। এটি ভবিষ্যতে আবার হামলার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেছেন।
আগামী শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বৈঠকের আগে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তি চুক্তিতে ‘কিছু ভূখণ্ড বিনিময়ের’ বিষয়টি থাকতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, দনবাসের যে অংশ এখনো কিয়েভ নিয়ন্ত্রণ করছে তা ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
অন্যদিকে রাশিয়ান বাহিনী তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় দশ কিলোমিটারের মতো অগ্রসর হয়েছে।
জেলেনস্কিও এটি স্বীকার করেছেন। তবে বলেছেন, এসব জায়গায় হামলায় যারা জড়িত তাদের কিয়েভ ধ্বংস করবে।
রাশিয়ার অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিয়ে তিনি বলেছেন, এটি পরিষ্কার যে মস্কোর লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের আগেই একটা বিষয় প্রচার করা যে ‘রাশিয়া অগ্রসর হচ্ছে আর ইউক্রেন হারছে’।
এদিকে, শুক্রবার ট্রাম্পের সাথে বৈঠকের সময় ভ্লাদিমির পুতিন কোন কোন দাবি তুলে ধরবেন তা এখনো জানানো হয়নি।
দনবাস-লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল ইউক্রেনর পূর্বাঞ্চলে। ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া এর একাংশ দখল করে আছে। মস্কো এখন লুহানস্ক প্রায় পুরোটা এবং দোনেৎস্কের অন্তত ৭০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।
তবে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় জেলেনস্কি বলেছেন দনবাস ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব ইউক্রেন প্রত্যাখ্যান করবে।
‘আমরা যদি আজকে দনবাস ছেড়ে দেই তাহলে রাশিয়ানদের জন্য হামলার প্রস্তুতির সেতু উন্মোচন করে দেয়া হবে,’ বলেছেন তিনি। এর আগে তিনি বলেছিলেন ইউক্রেন দখলদারদের তার ভূমি উপহার দিবে না।
তিনি একই সাথে দেশটির সংবিধানের কথাও তুলেছেন, যেখানে ভূখণ্ড বিনিময়ের বিষয়ে গণভোটের বিধান আছে।
মঙ্গলবার রাতের ভাষণেও জেলেনস্কি বলেছেন মস্কো ঝাপরিজিয়া, পকরোভস্ক ও নভোপাভলভ এলাকায় নতুন করে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত সপ্তাহ ট্রাম্প ভূখণ্ড বিনিময়ের কথা বলার পর কিয়েভসহ ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, মস্কো জোর করেই ইউক্রেনের সীমান্ত নতুন করে নির্ধারণ করতে পারে। যদিও রাশিয়া এখন ইউক্রেনের অন্তত ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
ওদিকে হোয়াইট হাউজ মঙ্গলবার বলেছে আলাস্কা বৈঠকে ট্রাম্প শুনবেন এবং একই রুমে বসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কিভাবে যুদ্ধ বন্ধ করা যায় তার সেরা ধারণাটা দিবেন।
এর আগ ট্রাম্প যা বলেছেন তাতে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে শান্তির কাছে নিয়ে আসার প্রত্যাশা কিছুটা কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে তিনি যখন শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণা দেন, তখন ট্রাম্পকে ইতিবাচক মনে হয়েছিলো যে, বৈঠক থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসতে পারে। তবে আলোচনা থেকে কিয়েভের জন্য ইতিবাচক কিছু আসার বিষয়ে আবারো গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। ওই বৈঠকে কিয়েভকে রাখা হয়নি। ‘আমাদের বাদ দিয়ে তারা কি আলোচনা করবে জানি না,’ বলেছেন তিনি।
তিনি আলোচনার জন্য আলাস্কাকে নির্ধারণ করাকে পুতিনের ‘ব্যক্তিগত জয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘তিনি বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডেই তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তার (পুতিন) সাথে বৈঠক করছে,’ বলেছেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এর আগে বলেছিলেন কিয়েভের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সমঝোতা হবে ‘মৃত সিদ্ধান্ত’।
বুধবার (১৩ আগস্ট) জেলেনস্কি ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ও ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক করার কথা।