রাজধানীতে সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এসব সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তাই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রেসক্লাবের সামনে থেকে চলে যেতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বুধবার (২৬ জুলাই) ইডেন কলেজে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন নির্দেশনা দেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এরপর যদি তাদের কোনো চাওয়া থাকে তাহলে পরবর্তীতে অবশ্যই আসতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক সমাবেশে একটা সমস্যা হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় শিক্ষকদের এখানে এনে যারা বসিয়ে রেখেছেন তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, তারা শিক্ষকদের জিম্মি করে অন্য কোনো কিছুতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ অপচেষ্টা বন্ধ করা উচিত। এখানে শিক্ষকনেতারা আছেন, তাদের উচিত শিক্ষকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়া। তাদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয় এমন কিছু করা শিক্ষকনেতাদের উচিত নয়।
অনুপস্থিত শিক্ষকদের প্রতি কঠোর হওয়ার নির্দেশনা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে কঠোর নজরদারির নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। নির্দেশনায় অনুপস্থিত শিক্ষক কর্মচারীদের ব্যাপারে গভর্নিং বডি ও প্রধান শিক্ষককে কঠোর হতে বলা হয়েছে। বুধবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ নিয়মিত ক্লাস এবং নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক-কর্মচারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থেকে পাঠদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত কঠোরভাবে নজরদারি করার অনুরোধ জানানো হয়। দেশের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখার বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টি ‘অতীব জরুরি’ বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সব দায়ভার সংশ্লিষ্ট গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সদস্যদের ওপর বর্তাবে বলে জানানো হয়।
এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি নিশ্চিতে একাধিকবার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি দৈনিক অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশনাও দিয়েছে মাউশি।
জাতীয়করণের এক দফা দাবি
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১৬ দিন ধরে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। আজ বৃহস্পতিবার ও কাল শুক্রবার শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ নিয়ে আলোচনা করতে শিক্ষক নেতাদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজনে কথা জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সে কর্মশালায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তবে, শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাউছার আহমেদ বলেন, হঠাৎ টেলিফোন করে শিক্ষা অধিদফতরের কলেজ শাখার পরিচালক ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি শাহেদুল খবির চৌধুরী আমাকে বললেন, ২৭ ও ২৮ জুলাই জাতীয়করণ নিয়ে ওয়ার্কশপ হবে। আন্দোলন স্থগিত করে সে ওয়ার্কশপে যোগ দিতে বললেন তিনি। আমি সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করলাম।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশি সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক স্তরে ২০ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে ৬৮৪টি সরকারি স্কুল। অর্থাৎ দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রায় পুরোটা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে চলে। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিকে শিক্ষকদের সংখ্যা পৌনে তিন লাখ। অভিযোগ আছে, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেকের পাঠদানের যোগ্যতা নেই। শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি মূল বেতন এবং এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। ‘বৈষম্য’ নিরসনের দাবিতে এর আগে বেশ কয়েকবার আন্দোলন করেছেন শিক্ষকরা। এখন পুরো মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের দাবি তুলেছেন তারা।
শিক্ষকদের দাবি, একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই অ্যাকাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। তাছাড়া বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয়।