বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রথম দিন নারায়াণগঞ্জের আড়াইহাজারে মহাসড়কে তাণ্ডব চালিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। সেদিনের অগ্নিসংযোগ, নাশকতা, সহিংসতা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ, হামলা, বেধম মারধরের পর উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করার পুরো দৃশ্য বিভিন্ন সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ করেছে র্যাব। পরে তাদের শনাক্ত করে র্যাব দেখেন দুষ্কৃতকারিরা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। তাদের গ্রেফতার করতে তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা ও গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করলে তারা দেখেন ওই হামলার পরিকল্পনাকারীরা এবং জড়িতরা বেশিরভাগই গুলশানের পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান করছে।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১১ একটি দল গুলশানের পাঁচ তারকা হোটেলটি ঘিরে রাখে। পরে সেখান থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা সবাই বিএনপি, যুবদল ও যুবলীগের সদস্য বলে জানা গেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আড়াইহাজার থানা বিএনপি সহসভাপতি মো. শাকিল মিয়া (৪০), সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল আহমেদ (৫২), আড়াইহাজার থানা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান (৫৪) থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিউদ্দিন ভুইয়া (৫১), থানা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক মো. শফিউদ্দিন ভুইয়া (৪৮), থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব (৫৩), থানা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হাবিবুর রহমান সেলিম (৪৮), আড়াইহাজার পৌর বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরমান মোল্লা (৪৬), আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. ইউসুফ আলী ভুইয়া (৬৯) ও আড়াইহাজার মাহমুদপুর ইউনিয়নের বিএনপি মো. মাসুম শিকারী (৪৫)।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার দুষ্কৃতকারীরা পাঁচ তারকা হোটেলে বসে বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার পরিকল্পনা করে আড়াইহাজার ও আশপাশের এলাকায় মহাসড়কে নাশকতা, সহিংসতাসহ তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। শুধু তাই নয়, ওই মহাসড়কে তাণ্ডব চালিয়ে গ্রেফতারকৃতসহ শতশত দুষ্কৃতকারী ইটপাটকেল ছুঁড়ে যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনা ঘটায়। এরফলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৩১ অক্টোবর অবরোধের প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মহাসড়কে নাশকতা, সহিংসতা ও পুলিশ সদস্য’কে কুপিয়ে জখম করার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, গণমাধ্যমের ফুটেজ, মামলার এজহার ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বিশ্লেষণপূর্বক জড়িত থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা নাশকতা ও সহিংসতা চালিয়ে পুলিশ সদস্যদের কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও জনজীবন বিপর্যস্ত করতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা, ইট পাথর, ককটেল, বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভয়ভীতি ও ত্রাসের সৃষ্টি করে ঢাকা-সিলেট মহসড়কে টায়ার পুড়িয়ে ও গাছের গোড়ালি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এসময় তারা মহাসড়কে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
কমান্ডার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, হামলা ও নাশকতার পর জড়িতরা রাজধানীর গুলশান ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেল ও নামীদামী হোটেলে নিরাপদে আত্মগোপনের জন্য অবস্থান করে। এ সকল নামীদামী হোটেলে অবস্থান করে তারা বিভিন্ন সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা করছিল।