সাংবাদিকতাই হলো গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি। সাংবাদিকরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক। গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় নিজের একটি মতামত প্রকাশ করেন। সময়ের আলোর পাঠকের জন্য লেখাটি অনুবাদ করেছেন কৃপাসিন্ধু পাল
সাংবাদিকতাই হলো গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি। সাংবাদিকরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক। এই সাধারণ সত্যগুলো এতটাই গভীরভাবে আমাদের সমাজের সঙ্গে জড়িত যে আমরা প্রায়ই সেগুলোকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেই। এ বছর, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের সেবা করার সম্মান অর্জনের জন্য আমি লড়াই করেছি। প্রতিটি পদক্ষেপে চতুর্থ স্তম্ভের (গণমাধ্যম) দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, বিশ্লেষণী এবং অবিচল সদস্যরা আমাকে জবাবদিহির আওতায় এনেছেন। না আমি, না বর্তমান বিরোধী দলের নেতা, কেউই এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি। আমাদের সমর্থকদেরও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে পাইনি। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে গিয়েছি, যেমন আমাদের পূর্বসূরিরা করেছেন, এটা মেনে যে এটিই গণতন্ত্রের অঙ্গ। এটি স্বাভাবিক এবং সাধারণ একটি অবস্থা ছিল।
কিন্তু এটি সবসময় সহজভাবে আসে না। সারা বিশ্বে সাংবাদিকরা এই মূল্যবোধগুলো রক্ষার জন্য ঝুঁকি নেন। যেমন ইউক্রেনের সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া রোশচিনা, যিনি মেরিউপোলের ভয়ংকর গল্পটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন-এখন রাশিয়ার হেফাজতে মারা গেছেন। অথবা গাজায় অবর্ণনীয় কষ্টের খবর দিতে গিয়ে নিহত একশরও বেশি সাংবাদিক। অথবা বিবিসির গ্যারি ও’ডনোহিউ, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হত্যাচেষ্টার সময় গাড়ির আড়ালে শুয়ে থেকে সম্প্রচার চালিয়ে গিয়েছিলেন। এই চমকপ্রদ দৃশ্যটি সাংবাদিকতার ঝুঁকি ও উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে তোলে : সাংবাদিকদের সাহসের মাধ্যমে, বিশ্ব সে সবকিছু দেখতে পারে যা জানা প্রয়োজন।
যুক্তরাজ্যে স্থানীয় এবং জাতীয় মিলিয়ে ৯০০টিরও বেশি সংবাদমাধ্যম রয়েছে। সংবাদজগতের ভবিষ্যৎ নিয়ে যতই হতাশার কথা শোনা যাক না কেন, এটি একটি অসাধারণ শক্তি প্রকাশ করে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম।
তবে এই জীবনীশক্তি আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো থেকে চোখ সরিয়ে নিতে পারবে না। যদিও আমাদের দেশে সরাসরি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হুমকি নেই, তবু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল প্রযুক্তি ধীরে ধীরে এটি ক্ষুণ্ন করতে না পারে। বিশেষ করে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার ধরনকে রূপান্তর করতে শুরু করেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সৃষ্টিশীল শিল্পগুলো, যার মধ্যে সংবাদমাধ্যমও রয়েছে, এ সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের শিল্পনীতিতে ভারসাম্য আনার জন্য, আমরা এই খাতগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। আমরা এই মৌলিক নীতিকে স্বীকৃতি দিচ্ছি যে প্রকাশ করা যেন তাদের কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং তার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে, বিশেষত যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করা হয়। এটি শুধু একটি প্রাণবন্ত সংবাদমাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, যেখানে বিশ্বস্ত তথ্য সরবরাহ আগের চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়, এটি ডিজিটাল মার্কেট, প্রতিযোগিতা ও ভোক্তা আইন যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করার আমাদের চলমান প্রচেষ্টারও অংশ। এই যুগান্তকারী আইনটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং প্রকাশকদের মতো এর ওপর নির্ভরশীলদের মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য পুনঃস্থাপন করবে।
আমরা সেই সাংবাদিকদের পাশেও আছি, যারা শুধু তাদের কাজ করার জন্যই হুমকির শিকার হন। সাংবাদিকরা সাহসী বলেই তাদের কখনো ভীতির সম্মুখীন হতে হবে, এমনটা হওয়া উচিত নয়। এটি সামাজিক মাধ্যমের হুমকির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য-অনলাইন নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার থেকে সুরক্ষার নতুন ধারা প্রবর্তন করবে এবং স্বীকৃত সংবাদ প্রকাশকদের কনটেন্টকেও সম্মান জানাবে। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও আমরা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তরাজ্যের নরম শক্তি ও কূটনীতি ব্যবহার অব্যাহত রাখব। তবে এটি আরও প্রযোজ্য সেই শক্তিশালী ব্যক্তিদের জন্য, যারা জনস্বার্থে কাজ করা সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে কৌশলগত মামলা (স্ল্যাপস নামে পরিচিত) ব্যবহার করে। এ ধরনের আচরণ অসহনীয় এবং আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা রক্ষার জন্য স্ল্যাপস ব্যবহারের বিরোধিতা করব, পাশাপাশি ন্যায়বিচারের সুযোগ নিশ্চিত করব।
কারণ এটি এমন একটি সরকার, যা সবসময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের জবাবদিহিতার আওতায় থাকতে হবে। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক ব্রিটিশ মূল্যবোধই সেই পরিবর্তন আনতে পারে, যা সাধারণ মানুষের প্রয়োজন-এটাই আমার রাজনৈতিক প্রকল্পের মূল কথা। শক্তিশালীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার সাহসী স্বাধীন সংবাদপত্রের চেয়ে আর কিছুই বেশি ঐতিহ্যবাহী, গণতান্ত্রিক বা ব্রিটিশ হতে পারে না।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী