রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক যুক্তরাষ্ট্র এক বছরে ২ লাখ ৭০ হাজার অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছে জাতি নতুন করে বিজয় দিবস উদযাপন করবে আজ দেশকে আরও উন্নত ও স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর : প্রধান উপদেষ্টা মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি আশা করি দ্রুত জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে : মির্জা ফখরুল শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে জাতীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু ১০ এপ্রিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতীয় কর্মসূচি মিথ্যা-প্রতিহিংসামূলক মামলা আদালতের মাধ্যমে শেষ হলে ফিরবেন তারেক রহমান : মির্জা ফখরুল

ভবিষ্যৎ ধকল মোকাবেলায় সহনশীলতা গড়তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আবশ্যক : প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট
আপডেট : শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩, ৮:২৮ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার এই সময়ে ভবিষ্যতের ধকল মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্বলদের জন্য সহনশীলতা তৈরিতে স্পষ্টত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আবশ্যক।

তিনি বলেন, ‘প্রলম্বিত যুদ্ধ এবং আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে চলেছে। যুদ্ধের প্রতিটি দিন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এবং বিশ্বের দূরতম প্রান্তে অনেক জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং ধ্বংস করছে।’

প্রধানমন্ত্রী আজ গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে (জিসিআরজি) ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করে বক্তৃতাকালে এই প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা আজকে যখন ক্রমবর্ধমান সংকট এবং মানবতার ওপর এর বিধ্বংসী প্রভাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি, তখন ইউক্রেনে সংঘাত চলছে।’

তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে, প্রতিদিন যুদ্ধে নতুন নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে যা আরও বেশি ধ্বংস ডেকে আনছে এবং সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে দারিদ্র্য ও বৈষম্য তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যা এবং অন্যান্য ধাক্কা বিশ্বজুড়ে খাদ্য, শক্তি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়েছে, যার ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতিতে বিলম্ব হচ্ছে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপে ভুগছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের ধকল মোকাবেলায় সহনশীলতা তৈরি করতে তার কয়েকটি নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা তার প্রথম চিন্তায় বলেন, ‘আমাদের জরুরিভাবে একটি সংস্কারকৃত আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামো প্রয়োজন যা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনাশর্তে রেয়াতি, স্বল্প-মূল্যের, স্বল্প সুদের তহবিলে প্রবেশাধিকারসহ আর্থিক সুবিধা দেবে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবশ্যই জরুরি অবস্থার সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলের ন্যায়সঙ্গত অ্যাক্সেসসহ সংকট ও বিপর্যয়কালে তহবিলে সহজ অ্যাক্সেস থাকতে হবে। এছাড়া, আইএফআই ও এমডিবি থেকে নি¤œ সুদে তহবিল প্রাপ্তির সুযোগ থাকতে হবে।’
দ্বিতীয়ত, তিনি বলেন যে কারণলো খাদ্যের মূল্য ও অ্যাক্সেসকে প্রভাবিত করে- যেমন রপ্তানি বিধিনিষেধ, মজুদ ও সরবরাহ চেইন বিকৃতি- এসবের সুরাহা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আমরা খাদ্য সরবরাহের উন্নতিতে (জাতিসংঘ) মহাসচিবের বাজার উন্মুক্ত রাখা, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অপসারণ এবং খাদ্য মজুদ ছেড়ে দেয়ার আহ্বানকে পূর্ণ সমর্থন করি।’
প্রধানমন্ত্রী ব্ল্যাক সী ইনিশিয়েটিভের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মানুষকে খাদ্য দিতে এবং জীবন বাঁচাতে এটি আরও সম্প্রসারণ করা দরকার।

তৃতীয় পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সংমিশ্রণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে জ্বালানি আমদানি হ্রাসের পাশাপাশি জ্বালানি শক্তিকে বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার নীতি সহায়তা প্রদান করে এবং জ্বালানি খাতে ও সবুজ জ্বালানির রূপান্তরে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে জ্বালানির রূপান্তরকে সহায়তা দেয়।’
খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন পরস্পর সম্পর্কিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার চতুর্থ চিন্তাধারায় বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো জলবায়ুু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পৌনপুন্য ও তীব্রতা বাড়ায়।
তিনি বলেন, ‘এটি আবার কৃষি, খাদ্য উৎপাদন এবং মানুষের বাস্তুচ্যুতিকে প্রভাবিত করে। তাই টেকসই জ্বালানি, খাদ্য উৎপাদনে উত্তরণ এবং জলবায়ু পদক্ষেপ অপরিহার্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মনে করেন যে জিসিআরজি’র তিনটি পলিসি ব্রিফ থেকে এর সুপারিশসমূহ এবং ‘এ ওয়ার্ল্ড অফ ডেট’ শীর্ষক রিপোর্ট চমৎকার, যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বৈশ্বিক ঐকমত্যকে সহজতর করবে।

পরিশেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে অবশ্যই আমাদের স্বার্থের ‘গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসাসমূহ’ সমুন্নত রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা কঠিন সময়ে জনগণের সহায়তায় তার সরকারের কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর কিছু লক্ষণ প্রকাশ করে যা আমাদের স্বস্তির অনুভূতি দেয়।’

তিনি বলেন, আমাদের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে কিছু কঠিন আর্থিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে আমাদের অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানি সীমিত করতে হয়, জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হয়, সরকারি খাতে সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস করতে হয়, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে আইএমএফের কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করতে হয়, মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এবং আমাদের জনগণকে কোনো জমি অনাবাদি জমি না রেখে খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা গুরুত্ব সহকারে নিশ্চিত করেছি যে কোনো ব্যক্তি যাতে খাদ্যের অভাবের শিকার না হয়।’
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বছর, ২০২৩, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের কথা রয়েছে। ‘আমরা ‘ক্ষয়ক্ষতি তহবিল’-এ সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি এবং বিদ্যমান জলবায়ু তহবিলে প্রবেশাধিকার সুবিন্যস্ত হয়েছে দেখতে চাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এছাড়া, শিপিং সেক্টরে প্রস্তাবিত কার্বন শুল্ক দ্বারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। আমরা জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় গ্লোবাল শিল্ডের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পগুলো চালু হয়েছে এমনটি দেখতে পাব বলে আশা করছি।’
নিজস্ব গ্রীন বন্ড ডিজাইন এবং চালু করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রশংসা করে

তিনি বলেন, ‘আমরা এই সমস্ত এবং অন্যান্য সমস্যা সমাধানে বিশ্বব্যাপী ঐকমত্য এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অপেক্ষায় রয়েছি।’
আঙ্কাটাড মহাসচিব রেবেকা গ্রিনস্প্যানের সঞ্চালনায় ভার্চুয়ালি এ আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মহাচিব আন্তোনিও গুতারেস।
সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বারবাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি পুরোধা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক সমন্বয় বিষয়ক মন্ত্রী এয়ারলাঙ্গা হার্তাতো, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড: সুব্রানিয়াম জয়শংকর, ডেনমার্কের উন্নয়ন সহযোগিতা ও বৈশ্বিক জলবায়ূ বিষয়ক মন্ত্রী ড্যান জার্গেনসেন, জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইয়ামাদা কেনেজি এবং জার্মানির কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী জোচেন ফ্ল্যাশবার্থ পর্যবেক্ষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর