জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
ডেপুটি স্পিকার বলেন, বঙ্গবন্ধু দুইবার ফাঁসির মুখোমুখি হয়েও অধিকার আদায়ে শাসক গোষ্ঠীর নিকট নতি স্বীকার করেন নি। তাই ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আজ রোববার সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের স্বাধীনতা সোপান চত্বরে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আবৃত্তি সংসদ এর উদ্যোগে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এ প্রধান অতিথি হিসেবে ডেপুটি স্পিকার এসব কথা বলেন।
ডেপুটি স্পিকার বলেন, এই ভাষার মাসেই আগরতলা মামলায় শাসক গোষ্ঠী প্রহসনের বিচারের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলো, তখন ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান ঘটে। ১৫ ফেব্রুয়ারিতে কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হলে সেই গুলি সার্জেন্ট জহুরুল হকের বুকে লাগলে তিনি নিহত হন। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, ছাত্র-জনতা রাস্তায় বেড়িয়ে আসে এবং ‘সার্জেন্ট জহুরুল হকের হত্যার বদলা নেবো, শেখ মুজিবকে মুক্ত করবো’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।
মো. শামসুল হক টুকু বলেন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের রক্তের ধারাবাহিকতায় বাংলার ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ফুঁসে উঠেছিল। এই হত্যার বিচার ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিলাম। সেখানে গুলি ও লাঠিচার্জে আহত ছাত্রের গায়ের রক্ত ড. শামসুজ্জোহার শার্টে লাগে। তিনি সেদিন একটি সভায় শার্ট খুলে দেখিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আর যদি আমার ছাত্রের গায়ে গুলি করা হয় তাহলে সে গুলি আমার ছাত্রের গায়ে না লেগে আমার গায়ে লাগবে।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে শাসক গোষ্ঠীর আধা সামরিক বাহিনীর উপর্যপুরি গুলি ও বেয়োনেটের আঘাতে ড. শামসুজ্জোহা শহীদ হন। ড. জোহা শহীদ হওয়ার পর জনতার রোষানলে পরে ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখেই পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী আগরতলা মামলার সকল আসামীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২২ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধীতে ভূষিত করা হয় ।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ আলপনা ইয়াসমিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শাহ আযম, সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হাসান আলী খানসহ গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত মত বিনিময় সভায় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত ভাষার অধিকার ও স্বাধীন দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তাবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।