শ্রেষ্ঠ জীবনী
ভেবেছিলাম নিজের জীবনী লিখবো,
একটা নিষ্কলুষ ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ জীবনী ।
সাদা পাতার উপর কলমের আঁচড় কেটে
একটা স্বচ্ছ প্রেমের ইতিহাস তুলে ধরবো,
যার প্রতিটি পাতায় পাতায় প্রতিটি বাক্যে-শব্দে
থাকবে ভালোবাসা আর ভালোবাসা
বয়ে যাবে ভালোবাসার খরস্রোতা নদী।
প্রতিটা পাতায় পাতায় বর্ণনা করবো
ভালোবাসার ব্যক্ত-অব্যক্ত প্রতিটা মূহুর্ত।
আমি লিখলাম বেশ কয়েকটা পৃষ্ঠা জুড়ে
বেশ কয়েকটা বছরের ভালোবসার গল্প
শুধুই লিখলাম, বেশ ভালোই চলছিলো।
মাঝপথে অবাধ্য শব্দরা কেন জানি
হারিয়ে যেতে লাগলো দৃষ্টির অন্তরালে।
জীবনে এসে গেলো ভালোবাসার ফুল কলিরা
ফুল কলিদের ফুলের দেশে নেচে গেয়ে
জীবন যখন বহতা নদীর মতো চলমান
ঠিক তখনি কাল বৈশাখী ঝরের তান্ডবে
সব এলোমেলো হয়ে আমি খেই হারালাম
দু’হাত ভরে এত হাতরালাম,
তবুও ধরা দিলো না কিছুতেই।
মাঝখানে কয়েকটা সাদা পাতা রেখেই
অবাধ্য শব্দ গুলোকে অনেক কষ্টে পোষ মানিয়ে
আমি আবারো সব গুছিয়ে শুরু করলাম।
নতুন করে লিখা শুরু করলাম একটা সুন্দর পরিনতি দেবো বলে,
একটা শ্রেষ্ঠ জীবনীর স্বাদ গ্রহণ করবো বলে।
কিন্তু একি!
হঠাৎ একটা ধূলো ঝড়ে বয়ে আসা
ক্ষুদ্র ধূলিকনা চোখে পড়তেই কয়েক ফোঁটা
নোনা জল গড়িয়ে কয়েকটা পাতা
ভিজিয়ে দিলো কিছু শব্দ মুছে
বাক্যগুলো এলোমেলো করে,
উপন্যাসের পটভুমি আবারো ঝাপসা করে দিলো।
তারপরও আমি হাল ছাড়িনি
একটা ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ জীনী লিখবো বলে।
একটা সুন্দর পরিনতি দেবো বলে
আমি আবারও শব্দ-বর্ণের খেলায় মেতে উঠলাম
কিন্তু নিয়তি !
গল্প শেষ হতে না হতেই
জীবনীর শেষের পাতা গুলো খালি রেখে
শব্দ-বর্ণ গুলোকে নিষ্ঠুরভাবে বাক্সে বন্দী করে,
আবেগ অনুভূতি গুলোকে কঠোর হস্তে দমন করে
এক কোনায় অনাদরে ফেলে রাখতে বাধ্য হলাম।
আমার আর শ্রেষ্ঠ জীবনি হয়তো লেখা হবে না।
শ্রেষ্ঠ জীবনীর স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো।
কালের আবর্তনে উপন্যাসের সাদা পাতা ধূসর হলো
এক অভিশপ্ত অগ্নিশিখা সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে
পুরো উপন্যাসটির অস্তিত্বই বিলীন করে দিলো।
সমাপ্তের আগেই উপন্যাসটি অভিশপ্ত হয়ে গেলো।
একটা ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস লেখার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল,
আর আমার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস স্বপ্ন হয়েই রইলো।
লেখক : কাজী জাকিয়া সুলতানা ইতি
কবি, সাহিত্যিক, আইনজ্ঞ ও সমাজসেবী।