ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের অমানবিক হয়রানি, সেশনজট ও বৈষম্যনিরসনসহ অটোপ্রমোশনের এক দফা দাবিতে ‘লং মার্চ টু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ অভিমুখে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ডিগ্রি বৈষম্যনিরসন ছাত্র আন্দোলন।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। কর্মসূচির বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় ও কেন্দ্রীয় টিমের অন্যতম সমন্বয়ক মামুন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এতে বলা হয়, কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সারা দেশে যেসব স্থানে আমাদের ডিগ্রি বৈষম্যনিরসন ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, সেসব পয়েন্ট থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে নতুন কর্মসূচি পালিত হবে।
রোববার ‘লং মার্চ টু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ কর্মসূচি সফল করতে আমরা সকল ডিগ্রি ফাইনাল শিক্ষার্থীরাসহ সকল ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের উপর হওয়া অবহেলা, অবিচার ও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনসহ ন্যায্য অধিকার আদায়ে অটো প্রমোশনের ১দফা দাবিতে জড়ো হবে ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি অনুযায়ী কেন্দ্রীয়ভাবে সকাল ৯ ঘটিকায় গাজীপুরের বোর্ড বাজারস্থ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হবেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে সারা দেশ জুড়ে ডিগ্রি ছাত্র-ছাত্রীদের হয়রানি, সেশনজট ও বৈষম্যনিরসনসহ ৩য় বর্ষের ফাইনাল শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশন দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্বতা পোষণ করেছে ডিগ্রি ১ম ও ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
তাঁরা বলেন, ডিগ্রি ৩য় বর্ষের ভাই-আপুরা দীর্ঘ ৬/৭ বছরের সেশনজট, হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার। আমরা সবাই আমাদের নিজেদেরও সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একাত্বতা করছি। ডিগ্রি কোর্সের সেশনজট চিরতরে বন্ধ করতে হলে আমাদের সমস্যা নিরসনে অটোপাস দিতে হবে এবং ৩য় বর্ষের ফাইনাল শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশন দিয়ে আমাদের সবার দ্রুত এক সাথে ফলাফল ঘোষণা করতে হবে।
জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি কোর্সে অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগই নিয়মিত, অনিয়মিত, প্রাইভেট ও সার্টিফিকেট কোর্সের এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। জীবিকার তাগিদে পড়ালেখার পাশাপাশি অনেকেই কর্ম করেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অনেক সময় নিজেদের কর্ম বা চাকুরিও ছেড়ে দিতে হয়। এসব শিক্ষার্থীরা কর্মব্যস্ত থাকায় তাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে। দেশে করোনা মহামারি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, কোটা আন্দোলন হয়েছে। এরই মাঝে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘসময় ধরেই পড়াশোনার বাইরে থাকায় তাদের শিক্ষাজীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও বৈষম্য নিরসনের জন্য এবং ডিগ্রী প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফলের ভিত্তিতে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছে ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এ দাবির সাথে গত কয়েক সপ্তাহে যুক্ত হয়েছে সারাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের ডিগ্রী কোর্সের ফাইনাল শিক্ষাবর্ষের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।
গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনের সাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হতে থাকেন। ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নানা দাবি নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের নিয়মিত, প্রাইভেট ও সার্টিফিকেট কোর্সের সকল সেশনের ছাত্রছাত্রীরা মহুর মহুর স্লোগান দিচ্ছেন ‘এক দফা এক দাবি, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফলের ভিত্তিতে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত ফলাফল অটো পাস চাই’।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের ২০১৯-২০ সেশনের রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এমতবস্থায় ফাইনাল পরীক্ষায় কেউ কোনো এক বিষয় অকৃতকার্য হলে ২০২৬ সালে ইম্প্রুভ দিতে পারবে না। এতে নতুন করে আবারও ডিগ্রিতে ভর্তি হতে হবে।
রবিউল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ডিগ্রী কোর্স সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও গত ৬/৭ বৎসরেও আমাদের ফাইনাল পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপ শেষ হয়নি। ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের হয়রানি ও বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে এবং অটোপাস দিয়ে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা আমাদের সবার জন্য মানবিক কারণে খুবই প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে অবহেলিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কোর্সের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ডিগ্রী থেকে বিসিএস বা ভালো চাকুরির পরিক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য ২ বৎসরের মাস্টার্স করা প্রয়োজন হয়। এতে সর্বশেষ ছাত্র-ছাত্রীর বয়স গিয়ে দাঁড়ায় ২৯/৩০ বৎসর।
রবিউল ইসলাম আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে আমাদের ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের অনেকেই আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। আন্দোলনে আহত-ট্রমায় ভোগা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়া কিভাবে সম্ভব? তাছাড়া দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যার পানিতে অনেক এলাকা তলিয়ে থাকার ফলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আজও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ।
রানা নামের অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বই-খাতা, আসবাবপত্র, কাথা-বালিশ, গৃহস্থালিসহ সকল প্রকার মালামাল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কর্দমাক্ত ভেজা ঘরে বসবাস কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বই-খাতা কিছুই নেই। সব কিছু পানিতে ভেসে গেছে। সব হারিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব।
মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ডিগ্রির নিয়মিত, প্রাইভেট ও সার্টিফিকেট কোর্সের সকল ফাইনাল শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন আন্দোলন ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সবাইকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে বলে জানান।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল কার্যক্রম বাকি রয়েছে, বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে ডিগ্রি শিক্ষার্থীরা মানবিক কারনে দ্রুততার ভিত্তিতে শেষ করতে এবং ডিগ্রী প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের সিজিপিএ এর ভিত্তিতে ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের সকল সেশনের ফাইনাল শিক্ষার্থীদের দ্রুত অটোপাস দিয়ে তৃতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। একই সাথে তারা দীর্ঘদিনের সকল প্রকার সেশনজট হয়রানি ও বৈষম্য মুক্ত ডিগ্রী কোর্স বাস্তবায়ন করার জন্য দাবি জানান।