আত্ম শক্তিতে বলীয়ান হয়ে মানবতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া মানবব্রতীর সংখ্যা পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। কজন পারে আর্তমানবতার কল্যাণ ও অবহেলিত বিশেষ জনগোষ্ঠীর সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে? , তাদের জন্য নিরলস ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা এ পৃথিবীতে নিতান্তই কম। তার মধ্যে আবার একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতির নাতনী ও একটি দেশের চারবারের নির্বাচিত কোনো প্রধানমন্ত্রীর কন্যা, নিজেকে রাজনীতি ও ক্ষমতার বাইরে রেখে মানব কল্যাণে ব্যস্ত থাকার ঘটনা সত্যি বিরল। সেই বিরল মানবসেবীর নাম সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
বাঙালি জাতির স্বপ্ন দ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা, অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আজ বিশ্বের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জীবনমানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এক আলোকবর্তিকার নাম।
এইতো মাস খানেক আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হয়ে তিনি বিশ্বদরবারে আরেকবার বাঙালি জাতিকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন।
বিশ্বখ্যাত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মেধা-মনন-প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সার্বিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আজ তারুণ্যের অনুকরণীয় আদর্শ ও স্বপ্নজয়ের উজ্জ্বল প্রতীক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় পর বেড়েছে তার কাজের পরিধি। আর্ত মানবতার সেবায় বেড়েছে তার দায়িত্ববোধ।
মানবব্রতী সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের এই এগিয়ে চলার জয়গান একদিনের নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী মরহুম ড. ওয়াজেদ মিয়ার রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরি হলেও রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে সায়মা ওয়াজেদ নিজেকে ভিন্ন পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন। সারাবিশ্বে আজ অটিস্টিক শিশুদের অধিকার আদায়ের প্রতীকী হিসেবে নিজেকে তৈরী করেছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই যোগ্য উত্তরসূরি।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য তিনি।সায়মা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী, ২০০২ সালে ক্লিনিকাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর লাভ করেন বিশেষজ্ঞ ডিগ্রী। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ের ওপর তাঁর গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমী অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
আমাদের দেশের অনেক অটিজম শিশু সমাজে আলোর মুখ দেখে না। অনেকে তাদের সনাক্ত করতে পারে না আবার অনেক বাবা-মা মনের কষ্টে কিংবা সামাজিক চক্ষু লজ্জার ভয়ে অটিজম শিশুদের আড়াল করে রাখে। সামাজিক সব অনুষ্ঠান থেকে তাদেরকে দূরে রাখা হয়। মানবাধিকার বঞ্চিত , চিকিৎসা বঞ্চিত সেই শিশুদের সামাজিক অধিকার ও তাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতেই আদর আর সোহাগের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, মানব সেবার ব্রতে উদ্ধুদ্ধ জননেত্রী শেখ হাসিনার মানবদরদী কন্যা। মানব সেবায় নানী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা, মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল গুণ পেয়েছেন তিনি। আর চিন্তা-চেতনা ও ভাবনায় নানা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যেনো তাঁকে তাড়িত করে মানব কল্যাণে দেশের সেবায়।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন তিনি। খুব অল্প সময়েরে মধ্যেই শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল । ২০১৪ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পুতুলকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করে। মনস্তত্ববিদ পুতুল যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। ২০১৩ সালে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলেও অন্তর্ভুক্ত হন তিনি।
২০১১ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অটিজম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের জন্য শত সেরা নারীর তালিকায় স্থান পান তিনি। বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্শ্বিস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অটিজম বিষয়ক শুভেচ্ছাদূত হিসেবে স্বীকৃতি পান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য ২০১৭ সালে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নির্বাচিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। অটিজম অর্থাৎ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য পুতুলের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, সাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, শিশুদের দুর্ভোগের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা এবং তাদের বাবা-মা ও যত্নকারীদের নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের কারণেই বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র পুতুলকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বলা হয়, পুতুল তার নিজ দেশ বাংলাদেশে স্বাস্থ্য এজেন্ডায় অটিজম ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে যে চেষ্টা করেছেন তা অভূতপূর্ব। এছাড়াও বাংলাদেশকে অটিজমের বিষয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উত্তরসূরি সায়মা ওয়াজেদের এগিয়ে চলার পথে যুক্ত হয় আরেকটি সাফল্যের পালক। বেড়েে যায় দায়িত্ব। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবল ঝুঁকিতে থাকা ৪৮টি দেশের যে জোট সিডিএফ তার চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। এই সিডিএফ এর নির্বাচিত চারজন দূতের একজন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সিডিএফ’র পক্ষ থেকে জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলায় জনগণের সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, যার রক্ত ও চেতনায় বহমান মানবিক সেবা আর দেশপ্রেম। শুধু অটিজম আর মানবিক সেবায় ব্যস্ত নয়, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করে নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মানবতার বাতিঘর খ্যাত মা শেখ হাসিনা ও ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ভাই সজীব ওয়াজেদ জয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী মিশন স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে দেশের মানুষের সেবায়ও এগিয়ে আসবেন তিনি এমন প্রত্যাশায় অপেক্ষমান দেশের জনগণ। পিতা, মাতা ও স্বজনকে হারিয়ে মৃত্যুকে তুচ্ছ মনে করে গণমানুষের কল্যানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মায়ের দেখানো সেই মানবকল্যানের পথে নিজেকে যোগ্য মায়ের যোগ্য কন্যা হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আমাদের অহংকার। আগামী বাংলাদেশের ঠিকানা । তাঁর মানবিক আলোয় উদ্ভাসিত হোক এদেশের তরুণ সমাজ। শুভ জন্মদিনে তার জন্য নিরন্তর শুভকামনা।
লেখক : মানিক লাল ঘোষ
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য।