বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
পুলিশের বিশেষ অভিযানে সারাদেশে গ্রেফতার ১,৭৫৪ জন মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন ইফার গর্ভনরেরা এনসিপির একটা এজেন্ডা বিএনপির নামে বদনাম করা: ইশরাক পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে : প্রধান উপদেষ্টা যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: তারেক রহমানের ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক পদক্ষেপ শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয়ে শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি হবে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ ও অভিভাবকের ফোন নাম্বার উল্লেখের নির্দেশ হাইকোর্টের সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশের সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত বাবা-মায়ের পাশে শায়িত শিক্ষিকা মাহরিন ‘বিমান বিধ্বস্তের সময় আর্তচিৎকারে পুরো ক্যাম্পাস ভারি হয়ে ওঠে’ প্রয়োজনে আবার ইরানে হামলা করবে যুক্তরাষ্ট্র : ট্রাম্প বিমান দুর্ঘটনায় শোক জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভিডিও বার্তা

জাতীয় বস্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি’র ভাষণের পূর্ণ বিবরণ

ডেস্ক রিপোর্ট
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ২:৩০ অপরাহ্ন

তারিখ:    ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪/১৩ ফাল্গুন ১৪৩০, মঙ্গলবার
স্থান:বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র

আসসালামু আলাইকুম
আজকের অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক, এমপি;
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব জনাব মোঃ আব্দুর রউফ,
ব্যবসায়ী সমিতির সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ,
গণমাধ্যমের সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ এবং
সম্মানিত ভদ্র মহিলা ও মহোদয়গণ;
শুভ সকাল।
বক্তব্যের শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ভাষা আন্দোলনের এই মাসে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহিদ রফিক, সালাম, বরকত, জববার, শফিউরসহ নাম না জানা শহিদদের। আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদৎ বরণকারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্য এবং অন্যান্য শহিদদের। পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় চার নেতা এবং জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে যাঁরা দেশের স্বার্থে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁদের সকলকে।

প্রিয় সুধী,
বঙ্গবন্ধু আজীবন ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন। জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বস্ত্রখাত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের সুখ্যাতি বিশ্বব্যাপী। দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে বস্ত্র ও পাট খাতের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, রপ্তানি বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি এবং দারিদ্র বিমোচনে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা বিবেচনায় বস্ত্র খাতের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বস্ত্র খাত উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার বস্ত্র ও পাট খাতের অংশীজনদের নীতিগত সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।
দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫% বস্ত্র শিল্প থেকে অর্জিত হচ্ছে। গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বস্ত্র খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের মাধ্যমে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে বস্ত্র খাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
সম্মানিত সুধীবৃন্দ,
বাংলাদেশের বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম মূল ভিত্তি হচ্ছে বস্ত্র খাত। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বস্ত্র শিল্পের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সর্ববৃহৎ শ্রমঘন এই সেক্টরে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মার্ট টেক্সটাইল সেক্টর গড়ে তোলা সম্ভব। দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদা পূরণ, রপ্তানী বৃদ্ধি এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশের বস্ত্র খাতকে যুগোপযোগীকরণ, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনে সহায়তাকরণ, টেকসই উন্নয়ন, বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, আধুনিকায়ন, সমন্বয় ও মান নিয়ন্ত্রণ, বস্ত্র বিষয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে চাহিদা ভিত্তিক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, গবেষণা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে বাস্তব ও বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ লক্ষ্যে বস্ত্র খাতে দক্ষ মানব সম্পদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে নতুন নতুন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হচ্ছে। স্মার্ট বস্ত্রখাত গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বস্ত্র বিষয়ক শিক্ষা করিকুলাম চালু করা হচ্ছে। আমি আশা করি, এ সকল কার্যক্রম বাংলাদেশের বিকাশমান বস্ত্রখাতকে আরো সমৃদ্ধ করবে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিকট আকর্ষণীয় করে তুলবে।
সম্মানিত সুধীবৃন্দ,
বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের ইতিহাস সুপ্রাচীন এবং গৌরবময়। বস্ত্রখাত দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার বিগত এক যুগে যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করায় শিল্পখাতে উৎপাদনশীলতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ (উরাবৎংরভরপধঃরড়হ) হচ্ছে। এছাড়া সরকারের বিনিয়োগ সহায়ক শুল্ক কাঠামো নির্ধারণ, উদ্যোক্তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুরস্কার প্রদান, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন উদ্যোক্তাবান্ধব ও সৃজনশীল কর্মসূচি এদেশে বস্ত্রশিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে শক্তিশালী অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।
সম্মানিত সুধীম-লী,
বর্তমানে বস্ত্রখাত আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগনিত মানুষের কর্মসংস্থান যার ৮০% মহিলা এবং পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস। পোশাক শিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ সবুজ শিল্পায়নের পথে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এদেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ২০০টি সবুজ কারখানার আবাসস্থল। বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি লিড গ্রিন কারখানার মধ্যে ১৩টিই বাংলাদেশের। দেশে পোশাক ও বস্ত্রখাতের বর্জ্যগুলোকে রিসাইকেল করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য সার্কুলার ফ্যাশন বা সার্কুলারিটি নিয়ে বস্ত্র কারখানাগুলো কাজ করছে।

সম্মানিত ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ,
পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বৈদেশিক বাণিজ্য এখন অনেক বেশী চ্যালেঞ্জিং, প্রতিযোগিতামূলক এবং জ্ঞান ও নীতিমালাভিত্তিক। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভর না করে রপ্তানি ঝুড়িতে পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি গন্তব্যও বাড়াতে হবে। গুটিকয়েক দেশের ওপর নির্ভর না করে বিশ্বের সম্ভাব্য সকল স্থানে আমাদের রপ্তানি পণ্যের বাজারকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। অর্থনৈতিক কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে আপনারা শুধু মুনাফার জন্য ব্যবসা পরিচালনা করছেন না। আপনাদের সামাজিক দায়িত্বের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকরাই উৎপাদনমুখী শিল্পের চালিকাশক্তি। কারখানা ও শ্রমিক একে-অপরের পরিপূরক। শ্রমিক ভালো থাকলে কারখানা ভালো থাকবে। কোন দুষ্টচক্র বা স্বার্থান্বেষী মহল যাতে উৎপাদনমুখী কারখানার পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারেও আপনাদের সজাগ থাকতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সরকার সবসময় আপনাদের পাশে আছে ও থাকবে।
সম্মানিত সুধীম-লী,
তৈরী পোশাক ও বস্ত্র খাতকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম শক্তিশালী, নিরাপদ ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশের তৈরী পোশাক ও বস্ত্র শিল্পে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য পোষাক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ, উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে হবে। এ বিষয়ে আমি শিল্পপতি, শিল্প উদ্যোক্তাগণসহ দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদানুযায়ী ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রযুক্তিসমূহকে আমাদেরকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা সম্প্রাসারণ ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে যে সব প্রতিষ্ঠান ও শিল্প উদ্যোক্তাগণ কাজ করে যাচ্ছেন আমি তাদেরকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আশা করি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনেও তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
জয় বাংলা।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর