দেশে হঠাৎ করেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। দ্রুত বাড়ছে শনাক্তের হার। গত কয়েক মাস ধরে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ১ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছিল। কিন্তু গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়েছে ১৩৩ দশমিক ১ শতাংশ। সোমবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৫৯ জন, যা ৭ মাস পর দেড়শ শনাক্তের সংখ্যা ছাড়াল। সর্বশেষ গত বছরের ২৬ অক্টোবর ১৯৬ জন রোগী শনাক্তের খবর জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দেড়শর নিচেই ছিল। তবে এ সময়ে শনাক্তের হার ৪ শতাংশের নিচে নামেনি। যদিও গত ২৮ মার্চ করোনায় সর্বশেষ একজনের মৃত্যু হয়।
এদিকে বিশ্বে জুড়ে সংক্রমণের প্রকোপ কমে এলেও চীনে করোনার নতুন ধরন ‘এক্সবিবি’তে ৬ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডাটা সফটওয়্যার ও মিডিয়া কোম্পানি ব্লুমবার্গের খবর অনুযায়ী বর্তমানে দেশটিতে সপ্তাহে ৪ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েক দিন আগে করোনাভাইরাসের কারণে জারি করা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বাংলাদেশ থেকেও করোনা বিষয়ক সব বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড বিষয়ক সরকারের জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, বিশ্ব থেকে করোনাভাইরাস একেবারে কখনোই নির্মূল হবে না। কম হলেও এখনও আক্রান্ত হচ্ছে, যাকে বলা হয় ‘এন্ডেমিক’। বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন ঋতুতে করোনা সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশির মতো ফিরে ফিরে আসবে। কখনো কমতে পারে আবার বাড়তে পারে। তবে এখন নতুন যে উপ-ধরন রয়েছে সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। আরও কয়েক দিন গেলে বোঝা যাবে মিউটেশন ভাইরাসের আচরণ কতটা বিপজ্জনক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, করোনায় দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩৯ হাজার ১৩০ জন। আর এখন পর্যন্ত দেশে মোট মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৬ জন। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে ২১ জন। এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা থেকে মোট সুস্থ হয়েছে ২০ লাখ ৬ হাজার ২৩৩ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এ ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয় ওই বছরের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যু হয়েছিল। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বে র প্রায় সব দেশ লকডাউনের পথে হেঁটেছিল। ২০২১ সালের মে মাসের শেষের দিকে দেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। এ সময় আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হয়। এরপর করোনার ‘গণটিকা’ দেওয়া শুরু হওয়ায় সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়ই কমতে শুরু করে।
সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ইদানীং কিছুটা বাড়লেও মহামারি আকার ধারণ করার কোনো আশঙ্কা নেই। যেহেতু টিকা সবাই নিয়েছে, সে জন্য কোনো মারাত্মক আকার ধারণ করছে না। এরপরও সতর্ক থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন ধরন ‘এক্সবিবি’র ব্যাপারে লক্ষ রাখতে হবে। এটা হলো-এ ভ্যারিয়েন্ট আগের ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কতটুকু পৃথক এবং কতটা শক্তিশালী ও কত দ্রুত ছড়ায়। যারা টিকা নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে কতটুকু কার্যকর। তবে যাদের টিকা নেওয়া আছে তাদের ওপর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। তবে মারাত্মক সংক্রমণের শঙ্কা না থাকলেও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এ ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই টিকা দেওয়ার পরও সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত। করোনার নতুন ধরন ‘এক্সবিবি’ মোকাবিলা করতে আচরণবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে নতুন করে প্রচারণা শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বিশেষ করে মাস্ক পরা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা আবার বাধ্যতামূলক করতে হবে। মোট কথা, এসব বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে সবাইকে ।