বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এই অগ্নি সহিংসতা যারা করেছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এই অগ্নি সন্ত্রাসীরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনায় আইনমন্ত্রী এক শোকবার্তায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং হতাহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এদিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাতে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না- তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত করেছেন এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৫৪ যাত্রী নিয়ে দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে কমলাপুর স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসে ট্রেনটি। যাত্রাপথে ১১টি স্টেশনে বিরতি নেয় বেনাপোল এক্সপ্রেস। ট্রেনে কমলাপুরগামী যাত্রী ছিলেন ৪৯ জন। ট্রেন ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রাত ৯টার দিকে। এর মধ্যে রাজধানীর গোপীবাগ পৌঁছালে আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের চার বড়ি পুড়ে ছাই হয়েছে। এসব বগিতে থাকা চারজনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকজন। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ট্রেনটি বেনাপোল থেকে কমলাপুরে আসছিল। রাত ৯টার দিকে গোপীবাগ এলাকায় ট্রেনের বগিতে আগুন দেয়া হয়। প্রথমে তিনটি বগিতে আগুন লেগেছে। পরে আরেকটি বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। মোট চারটি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের চেষ্টায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
মাইন উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের উদ্ধার কার্যক্রম এখনও চলছে। আরও মরদেহ উদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। যারা দগ্ধ তাদের ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, দুর্বৃত্তরা নাকি নাশকতাকারীরা আগুন দিয়েছে, তা আমাদের গোয়েন্দারা তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত ভেতর থেকে চারটি মরদেহ পাওয়া গেছে। ট্রেনের চালকসহ অন্যদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। কীভাবে আগুন লেগেছে, তা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। এছাড়া রেল কর্তৃপক্ষও তদন্ত করছে।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ট্রেনটির তিনটি বগি পুরোপুরি পুড়ে যায়। পরে একটি বগি থেকে মা ও শিশুসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে দেশে গত ২৮ অক্টোবরের পর ট্রেনে আগুনের ঘটনায় মোট আটজনের মৃত্যু হলো।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তিনটি বগি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন বলা যাবে না, কী কারণে হয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ড যে, নাশকতা সেটি স্পষ্ট। বোঝাই যাচ্ছে পরিকল্পিতভাবে এ নাশকতা করা হয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের প্রতি এ ধরনের সহিংসতা ও আগুনে পুড়িয়ে মারা মেনে নেয়া যায় না। জড়িতদের আইনের কাছে যেতে হবে। তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিস অগ্নি নির্বাপণের কাজটি করেছে। রেলওয়ে, ডিএমপি, বিজিবি ও র্যাবও সহায়তা করেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে। ফায়ার সার্ভিস এখন ভেতরে কাজ করছে। আমাদের তথ্য অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টরা আলামত সংগ্রহের কাজ করছে। অমরা এ ঘ নাশকতার উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ট্রেনটির তিনটি বগি পুরোপুরি পুড়ে যায়। পরে একটি বগি থেকে মা ও শিশুসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।