শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক যুক্তরাষ্ট্র এক বছরে ২ লাখ ৭০ হাজার অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছে জাতি নতুন করে বিজয় দিবস উদযাপন করবে আজ দেশকে আরও উন্নত ও স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর : প্রধান উপদেষ্টা মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি আশা করি দ্রুত জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে : মির্জা ফখরুল শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে জাতীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু ১০ এপ্রিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতীয় কর্মসূচি মিথ্যা-প্রতিহিংসামূলক মামলা আদালতের মাধ্যমে শেষ হলে ফিরবেন তারেক রহমান : মির্জা ফখরুল

গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি, ১৯০ জন বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগ

নয়াকণ্ঠ রিপোর্ট
আপডেট : রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩, ৭:৫২ অপরাহ্ন

গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের ১৯০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
শনিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নীতির পরিপন্থী। বাংলাদেশের গণমাধ্যম উগ্রবাদী শক্তি, জঙ্গি, জামায়াত ইসলামীর মতো যুদ্ধাপরাধীর দল, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যারা প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলোকে নির্মূল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে। এর ফলে বাংলাদেশ তালেবানের মতো একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি নিয়ে হাসের বক্তব্যটিকে কট্টরপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা স্বাগত জানিয়েছে। এই পক্ষটি অন্যান্য নীতিতে পশ্চিমাদের নিন্দা করে, মুক্তচিন্তকদের শত্রু মনে করে এবং তারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধীদের দায়মুক্তির পক্ষে। হাসের বক্তব্যকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত ‘বাঁশের কেল্লা’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে হাসকে ‘একজন সত্যিকারের বন্ধু’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অতীতে এই পেজে ব্লগার ও মুক্তচিন্তকদের হত্যার পক্ষে নানা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। ফলে, এই পেজে হাসের বিবৃতি নিয়ে উল্লাস আসলে ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকদের জন্য নিগূঢ় বার্তা দেয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দেখেছি, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধ, ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকদের কণ্ঠরোধ ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য নিয়ে “বাঁশের কেল্লা” পেজে আস্ফালন চলছে।’
এতে বলা হয়, ‘আমরা দেখেছি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ভিসা নীতিতে গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করা থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু হাস তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার না করায় ধারণা করা যায়, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়তো চূড়ান্ত। এরই মধ্যে সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা এটির নিন্দা করেছেন। হাসের এই বক্তব্যের কারণে সংবাদমাধ্যমগুলো সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধাপ্রাপ্ত হবে বলে অনেকেই মত দিয়েছেন।’
হাসের দ্বৈতনীতির বিষয়টি তার বক্তব্যে উঠে এসেছে উল্লেখ করে বিশিষ্ট নাগরিকরা বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে আসার পর থেকে তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু তার এখনকার অবস্থান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মৌলিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা ছিল, গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে তারাও ভিসা নীতির আওতায় আসবেন। কিন্তু হাসের বিবৃতিতে দেখা যায়, বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি, আর সেখানে গণমাধ্যমের ভূমিকার যে সুযোগ ছিল, সেটিকে মারাত্মক বাধাগ্রস্ত করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রচেষ্টা দেখেছি, যা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিপন্ন করার সম্ভাবনা রাখে। র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞার দাবি উত্থাপনে বড় ভূমিকা রেখেছেন দেশটির বিতর্কিত মার্কিন সিনেটর বব মেনেন্ডেজ। এ ছাড়া ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষরে একটি বিবৃতি প্রদান করা, যেখানে দাবি করা হয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে, যা একেবারে বাস্তবতাবিবর্জিত এবং ন্যায়সংগত নয়। ফলে, এই বিষয়গুলো আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করে যে এ ধরনের কার্যক্রমের পেছনে ভিন্ন কোনো ইচ্ছা রয়েছে কি না।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অতীতে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে জামায়াত এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা থেকে শুরু করে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হামলা আমরা দেখেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা ব্যতীত এসব সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা অসম্ভব। বিএনপি-জামায়াত সর্বশেষ যেই জোট সরকার গঠন করেছিল, সে সময়ও ২৮ হাজারের বেশি হামলা চালানো হয় সংখ্যালঘুদের ওপর, যেখানে তাদের সম্পত্তি, বাড়িঘর দখলসহ মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়, জীবন্ত মানুষকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে তৎকালীন সরকারকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। কিন্তু বর্তমান সরকার নির্বাচিত হয়ে আসার পর রাষ্ট্রের সহায়তায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়েছে। আর সাম্প্রদায়িক এই সম্প্রতি বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দেখতে পেলাম, ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটেনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দন্ডপ্রাপ্ত এবং আত্মস্বীকৃত খুনিদের ক্ষেত্রে, যাদের যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় প্রদান করছে। এটি বাংলাদেশের জন্য এমন এক জঘন্য হত্যাকান্ড, যা মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটায়। সুতরাং আমরা মনে করি যে ভিসা নীতিটি কীভাবে প্রয়োগ করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যৌক্তিক। কারা এর অনুমোদন দেবে এবং এই ধরনের পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে কারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা বোঝাটাও জরুরি। কারণ, আমরা রাষ্ট্রদূতের কার্যকলাপ দেখেছি এবং অন্যান্য কার্যাবলিও দেখেছি, যা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া মৌলবাদী শক্তিগুলোর জন্য বারুদ হিসেবে কাজে এসেছে।’
বিবৃতিতে লেখক, অধিকারকর্মী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাপরাধবিরোধী প্রচারক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ মোট ১৯০ জন বিশিষ্ট নাগরিক স্বাক্ষর করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শহীদজায়া সালমা হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, আইনজীবী ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত, চলচ্চিত্রনির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীর প্রতীক, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক নূরন নবী, অধ্যাপক শিল্পী আবুল বারক আলভী, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, চিকিৎসক শেখ বাহারুল আলম, চিকিৎসক ইকবাল কবীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাজকর্মী সুব্রত চক্রবর্ত্তী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূতত্ত্ববিদ মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল গাফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, সমাজকর্মী কাজী লুৎফর রহমান, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, আইনজীবী আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, নির্মল রোজারিও, সভাপতি বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন, ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, সাধারণ সম্পাদক বুড্ডিস্ট ফেডারেশন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর