রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে চোরাই আইফোন ক্রয়-বিক্রয় চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা-উত্তরা বিভাগের একটি টিম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ মনির হোসেন, জহির হোসেন, মোঃ সুরুজ হোসেন, রকি, রাজন আহমেদ, মোঃ রাসেল ও মোঃ তানভির আহম্মেদ। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে ৪৫টি আইফোন, ১টি মোবাইল ফোন, ১টি ল্যাপটপ, ২১টি আইফোনের বডি, ৯৭টি মাদারবোর্ড ও এক রোল সিলভার কালার ফয়েল পেপার উদ্ধার করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ ইমরান হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে রাজধানীর পরিবাগ ও হাতিরপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ১৮ নভেম্বর জনৈক ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে গেলে সেখানে রিসিপশন থেকে তার আইফোন, এনআইডি কার্ড ও ব্যাংকের ৩টি কার্ড চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা টিম। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুত্তির সহায়তায় চুরির ঘটনায় জড়িত চোরদের শনাক্ত করা হয়। এরপর রাজধানীর পরিবাগ ও হাতিরপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃতরা চোরাই মোবাইল ফোন বিশেষ করে চোরাই আইফোন ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন যাবত চোরাই আইফোন ক্রয়-বিক্রয়, লক খোলা ও পার্টস আলাদা করে বিক্রি করে আসছে।
গ্রেফতারকৃতদের অপরাধ প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে মোবাইল চোরেরা আইফোনগুলো চুরি করে চোরাই আইফোন ক্রেতার কাছে বিক্রি করতো। চোরাই আইফোন ক্রেতারা আবার আইফোনগুলো বড় পার্টির কছে বিক্রি করতো। আইফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে তা বন্ধ থাকলেও আইফোনের মালিক ডিভাইসের গতি-প্রকৃতি বা লোকেশন কোথায় আছে তা বুঝতে পারে। বড় পার্টির সদস্যরা চুরি করা আইফোনগুলোর গতি-প্রকৃতি বা লোকেশন যাতে না জানা যায় এজন্য সিলভার কালারের ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে রাখতো। এরপর তারা আইফোনগুলো ল্যাপটপে ফ্লাশ দিয়ে সকল ডাটা মুছে ফেলে মার্কেটে বিভিন্ন পার্টির কাছে বিক্রি করে দিতো।
জানা যায়, আইএমইআই পরিবর্তন করতে না পারায় ও আইফোনের খুচরা পার্টসের চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় গ্রেফতারকৃতরা আইফোনের যন্ত্রাংশ খুলে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দিতো।
এ ব্যাপারে কিছু সুপারিশ করেছেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মোবাইল ফোন চুরি বা ছিনতাই হলে সাথে সাথে নিকটস্থ থানায়/ডিবি পুলিশকে জানান। আইফোন ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতার সাথে অফিসিয়াল ফোন দেখে কিনতে হবে। বিক্রেতা/সরবরাহকারী অবৈধ বা ভুয়া কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে। আইফোন ক্রয় করার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে কিনতে হবে। অল্পদামে লোভনীয় অফার পেয়ে চোরাই আইফোন কিংবা কোনো মোবাইল ফোন কিনতে উৎসাহী হবেন না। আইফোন বা মোবাইল চোরচক্র বা চোরাই আইফোন ক্রয়-বিক্রয় চক্রের কোনো তথ্য পেলে নিকটস্থ থানা ও ডিবি পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। মোবাইল ফোন বিশেষ করে আইফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাসওয়ার্ড/প্যাটার্ন লক/স্ক্রিন লক/ফিঙ্গারপ্রিন্ট/ফেস লক ব্যবহার করুন ও মাঝে মাঝে লক/পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। কোথাও মোবাইল ফোন পেলে ব্যবহার না করে নিকটস্থ থানায় জমা দিন।