রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় শাহজাদী ও মুনা নামের দুই চিকিৎসকের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুলতান উদ্দিন সোহাগ এ জামিন দেন। এর আগে ওই দুই চিকিৎসকের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
চলতি বছরের ১৫ জুন এই দুই চিকিৎসককে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে তা রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম ফারহা দিবা ছন্দা আসামি মুনার ও ঢাকা মহানগর হাকিম আফনান সুমি আসামি শাহজাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর জামিন চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবী।
সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় মাহবুবা রহমান আঁখি মারা যান বলে অভিযোগ করেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। তিনি দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছেন তাদের নবজাতক সন্তানও।
এ ঘটনায় ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় মোট ছয়জনের নাম উল্লেখসহ ৫ থেকে ৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা করেন ইয়াকুব আলী। এরপরই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। মামলার অন্য আসামিরা হলেন— ডা. মিলি, সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজ, জমির ও এহসান।
অভিযোগ রয়েছে, তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। এমনকি তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।
প্রসব ব্যথা ওঠায় ৯ জুন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তার অধীনে মাহবুবাকে ভর্তি করা হয়। তখন ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সংযুক্তা সাহা আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন। তার দুই সহযোগী ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহা আঁখির ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করেন। সেটি হওয়ার পর আঁখির সন্তানের জটিলতা দেখা দেওয়ায় তাকে এনআইসিইউতে রাখা হয়। একই সঙ্গে আঁখির অবস্থার অবনতি হলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত ১০ জুন বিকালে আঁখির সন্তানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমন্ডি থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করেন ইয়াকুব আলী। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়।
মামলা দায়েরের পর গত ১৫ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর গত ১৮ জুন দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহবুবা রহমান আঁখিও। গ্রেপ্তারের পর গত ১৫ জুন ডা. শাহজাদীসহ দুজন আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠান আদালত।