চিকিৎসক না হয়েও ডিপিআরসি নামক হাসপাতাল গড়ে নিজেই চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন ফিজিওথেরাপিস্ট শফিউল্লাহ প্রধান। রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট ব্যবহার করে আসছিলেন তিনি। এমন সব অভিযোগে এই ভুয়া চিকিৎসকের হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটিতে তালা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা অভিযানে বের হয়ে আসে নানা অনিয়মের চিত্র।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি টিম এ অভিযানে অংশ নেয়। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- উপপরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান, সহকারী পরিচালক ডা. মো. বিল্লাল হোসেন, মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সালেহিনসহ আরও তিন অতিরিক্ত পরিচালক।
অভিযানে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফিজিওথেরাপিস্ট শফিউল্লাহ চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসকের পরিচয় ও চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। নিজের নামের পাশে সহযোগী অধ্যাপক পদ ব্যবহার করতেন। তবে, এর সাপেক্ষে বিএমডিসির কোনো অনুমোদনপত্র দেখাতে পারেননি।
জানা গেছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা বিভিন্ন ডিগ্রির সনদ দেখালেও সেগুলো দিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি বিভিন্ন চিকিৎসকের অজান্তেই তাদের নাম ব্যবহার করে রোগী ভর্তি করানো হচ্ছিল। এছাড়া আবার ২০ শয্যার কথা বলেও তার চেয়েও অনেক বেশি পাওয়া গেছে।
অভিযান প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের মেডিকেল অফিসার ডা. সালেহিন বলেন, এমবিবিএস না করে এমনকি বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়া নিজের নামের পাশে চিকিৎসক পদ ব্যবহার করে আসছেন শফিউল্লাহ নামের ওই ব্যক্তি। এমনকি চিকিৎসা দিচ্ছেন। যা গুরুতর অপরাধ। যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় মেয়াদোত্তীণ রি-এজেন্ট দিয়ে এবং ল্যাবে যে ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছিল ওই পরিসরে তা করার কথা নয়। এজন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার, তা তাদের নেই।
তিনি বলেন, এখানে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা হতো প্রচুর। প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিয়ে ভুক্তভোগী হয়েছেন- এমন রোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে। সত্যতা পাওয়ায় মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল লিখিতভাবে দেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে অভিযানে নামার ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, গত বছর যেসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই, মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অনিয়ম করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি। চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ আসছে। তাই, তাদের বিরুদ্ধে আবারও ব্যবস্থা নিতে হবে।