তরুণ প্রজন্মকে নেশায় আসক্ত করতে হিট-নট-বার্ন বা ই-সিগারেট একটি নতুন অস্ত্র। সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে এই ইলেকট্রনিক সিগারেট বাজারজাত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ই-সিগারেট ধরনের পণ্যকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
দেশে ই-সিগারেটের শুরুর দিকে কেবল রাজধানীর অভিজাত এলাকার কিছু দোকানে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সারা দেশেই পাওয়া যায়। আমরা দেখেছি পুরোনো দোকানগুলোর বিক্রি কমেনি বরং কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর নতুন ও পুরোনো দোকানগুলোতে দিন দিন বিক্রি বাড়ছে। তাতে বোঝা যায় দেশে এই সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে।
প্রায় ৮ হাজার বিভিন্ন স্বাদ-যেমন ফল, সফট ড্রিংকস, চকোলেট, পুদিনা এবং অন্যান্য ফ্লেভারে ই-সিগারেটগুলো ‘স্বাস্থ্যকর এবং ট্রেন্ডি পণ্য’ হিসেবে বাজারজাত করা হয়, যা তরুণ প্রজন্মকে কৌতূহল বাড়িয়ে তোলে এবং নেশায় আকৃষ্ট করে।
সিগারেট ছাড়তে ই-সিগারেটের ব্যবহার করেন অনেক ধূমপায়ী। পারতপক্ষে ই-সিগারেট মোটেও সিগারেট ছাড়তে সাহায্য করছে না বরং স্মোকাররা সিগারেট ও ই-সিগারেট দুটিতেই আসক্ত হয়ে পড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্বের অনেক দেশে ই-সিগারেটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এর ভয়াবহতা বুঝতে পেরেছে এবং ইতিমধ্যে ৪২ দেশ তাদের দেশে ই-সিগারেটকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে এবং আরও ৫৬ দেশ ই-সিগারেট ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। পাশাপাশি আরও অনেক দেশ তাদের নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রদেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে ই-সিগারেট।
বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিয়ে স্পষ্ট কোনো আইন না থাকায় দেশে আমদানি ও বিক্রয় করা হচ্ছে অত্যন্ত সুলভ মূল্যে। শুধু দোকান কিংবা মার্কেটেই নয়, ই-সিগারেট বিক্রয় হচ্ছে অনলাইন মার্কেটগুলোতেও। বর্তমানে ০.২ শতাংশ মানুষ ই-সিগারেট ব্যবহার করলেও খুব তাড়াতাড়ি এই সংখ্যাটি বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ধূমপায়ীদের মধ্যে যারা ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছেন, কিছু কোম্পানি অপকৌশলের মাধ্যমে তাদের আবার ই-সিগারেটে আসক্ত করার চেষ্টা করছে। তাই এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের তামাকজাত দ্রব্যের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে, তার মাধ্যমে ই-সিগারেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মাধ্যমেও মাদক (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ধারা ৫ অনুযায়ী ই-সিগারেট আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধনে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে অভিজ্ঞ মহল। তাই দেশের তরুণ সমাজকে রক্ষায় এখনই ই-সিগারেট বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।