বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গণমাধ্যম সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে : তথ্য উপদেষ্টা সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি রোধে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করে অধ্যাদেশ পৃথিবীর সুরক্ষায় ‘জিরো কার্বন’-ভিত্তিক জীবনধারার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বেক্সিমকো ফার্মায় রিসিভার নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত গাজা-লেবাননে ইসরায়েলি ‘হত্যাযজ্ঞ’ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান সৌদি যুবরাজের সরকারের তিন মাস পূর্তি : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য অর্জন আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বিদেশের মাটিতে আওয়ামী দুষ্কৃতকারীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে আইনজীবীদের প্রতিবাদ চট্টগ্রামে হাছান মাহমুদ ও নওফেলসহ ৬০ জনের নামে মামলা রাজধানীতে মিছিল : নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ৫৫ নেতাকর্মী কারাগারে আজারবাইজানের উদ্দেশ্যে যাত্রা প্রধান উপদেষ্টার মোহাম্মদপুরে প্রবাসীর বাসায় হামলা ও মারধরের অভিযোগ আরও ১১৮ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে

অপহৃত মেয়েকে ফেরত নিতে এসে ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে মা কারাগারে, অবশেষে দুইজন গ্রেপ্তার

নয়াকণ্ঠ রিপোর্ট
আপডেট : শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ৫:৫১ পূর্বাহ্ন

১৪ বছরের কিশোরী মেয়েকে অপহরণ করে প্রতিবেশী এক যুবক। এ ঘটনায় আদালতে গিয়ে মামলা করেন কিশোরীর মা। এরপরই মীমাংসার জন্য উঠেপড়ে লাগেন অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে মাকে রংপুরে ডেকে নেয় তারা। পরে তার অজান্তেই একটি শপিং ব্যাগে জাল টাকা ও গাঁজা ভরে হাতে দিয়ে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়। এরপরই পুলিশে খবর দিয়ে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করানো এবং মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২৮ মার্চ রংপুর নগরীতে অপহৃত কিশোরী মেয়ের সন্ধানে এসে প্রতারক চক্রের পাতানো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়েন ওই মা। এ ঘটনায় অপহৃত কিশোরীর বাবা তার মেয়েকে উদ্ধারসহ নির্দোষ স্ত্রীর কারামুক্তির দাবিতে গত ১৬ এপ্রিল রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

মেয়েকে খুঁজতে এসে মা কারাগারে, সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন অসহায় বাবা’ শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট সংবাদ প্রকাশ করে। এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন।

ঘটনার আসল রহস্য উদ্‌ঘাটনে জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ বিভাগ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জাল টাকা ও গাঁজা দিয়ে অসহায় সেলিনা বেগমকে ফাঁসানোর প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে ওই ঘটনায় প্রতারক চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ও ছবির হোসেন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জাল টাকার বাক্স, দুটি মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড জব্দ করে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে ওই নারীকে জাল টাকা ও গাঁজা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। সকল সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করলে কোর্ট ওই নারীকে অব্যাহতি দেবেন।

এদিকে মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগীরা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বাসিন্দা। অপহরণের শিকার কিশোরীর বাবা পেশায় নৈশপ্রহরী, তার স্ত্রী বাড়িতেই দরজির (কাপড় সেলাই) কাজ করেন। পাঁচ সদস্যদের অভাবের সংসারে কিশোরী মেয়েকে পড়াশোনা করাতে স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করান।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আরিফুল ইসলাম (২২) তার মেয়েকে অপহরণ করেন। ঘটনার ৬ দিন পর ২ মার্চ কিশোরগঞ্জ থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পরে ৪ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ নীলফামারীতে মামলা দায়ের করেন ওই কিশোরীর মা।

মামলা চলাকালীন প্রতিপক্ষের লোকজন মামলা উঠিয়ে নিতে নানাভাবে আপোসের চেষ্টা করে। কিন্তু ওই পরিবার থেকে আপস করতে রাজি না হলে, নানা ছক কষতে থাকে প্রতিপক্ষরা। বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হুমকি-ধামকি দেখানোসহ বাড়িঘরে আগুন দিয়ে উচ্ছেদ করার ভয়ভীতি দেখায় আরিফুলের পরিবার। এরই মধ্যে প্রতারক চক্রের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়েন ওই কিশোরীর মা।

এ বিষয়ে অপহৃত কিশোরীর বাবা বলেন, মেয়ের সন্ধান চেয়ে প্রশাসনের প্রতি আকুতি জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। অপহৃতা মেয়েকে রংপুরে পাওয়া গেছে এমন সংবাদ দিয়ে আমার সহজ-সরল স্ত্রীকে গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে আসেন লাভলু মিয়া। পরে কৌশলে একটি শপিং ব্যাগ সেলিনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সটকে পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর কোতোয়ালি থানা-পুলিশ আমার স্ত্রীকে আটক করে ওই শপিং ব্যাগ থেকে ২৫ গ্রাম গাঁজা ও ১০ হাজার জাল টাকার নোট উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় বর্তমানে আমার স্ত্রী কারাগারে রয়েছে। আমার স্ত্রীর মুক্তি ও মেয়েকে উদ্ধার চাই। যারা আমার মেয়েকে অপহরণ করেছে, আমার স্ত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে, আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, ২৮ মার্চ একজন নারীকে ২৫ গ্রাম গাঁজা ও ১০ হাজার টাকার জাল নোটসহ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পরে জানতে পারি ওই নারীকে ফাঁসানো হয়েছে, এর নেপথ্যে অন্য কাহিনি আছে। এরপর আমরা সেটি নিয়ে ইনভেস্টিগেশন শুরু করি। তদন্ত করতে গিয়ে আমরা তার সত্যতা পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই নারীকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এই প্ল্যানটাকে পুরোটাই শনাক্ত করেছি। যারা যারা সম্পৃক্ত আছে তাদেরকেও শনাক্ত করছি। এর মধ্যে মূল মাস্টার মাইন্ড দেলোয়ার মাস্টার ও ছবির হোসেন। এ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিজ্ঞ আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা করব। পরবর্তীতে রিমান্ডে নিয়ে এর সঙ্গে কারা জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনব।

এক প্রশ্নের জবাবে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে ওই নারীকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ফাঁসানো হয়েছে। আমরা যখন আমাদের সকল সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারব, তখন ওই নারীকে কীভাবে ফাঁসানো হয়েছে সে বিষয়ে আমরা সেভাবেই রিপোর্ট দাখিল করব। আশা করছি কোর্ট তাকে অব্যাহতি দেবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর