এনিমিয়ার অর্থ রক্তশূন্যতা। রক্তের একটি বিশেষ উপাদান লোহিত রক্তকণিকা বা আরবিসি। লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামের একটি বিশেষ ধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে। এই হিমোগ্লোবিন বয়স এবং লিঙ্গভেদে যখন স্বাভাবিক মাত্রার নিচে নেমে যায়, তখন তাকে এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলে।
এনিমিয়ায় হিমোগ্লোবিন নিজেই কমে যেতে পারে অথবা পুরো লোহিতকণিকাই সংখ্যায় কমে যেতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৩.৫-১৭.৫ গ্রাম/১০০ মিলি। নারীদের ক্ষেত্রে এর মাত্রা হলো ১১.৫-১৫.৫ গ্রাম/১০০ মিলি। পুরুষের তুলনায় নারীরা এনিমিয়ায় বেশি ভোগে।
কারণ
বিভিন্ন কারণে এনিমিয়া হতে পারে, যেগুলোকে মোটামুটিভাবে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
রক্তের লোহিতকণিকার উৎপাদনজনিত সমস্যা
* আয়রনের ঘাটতিজনিত এনিমিয়া
* ভিটামিন বি, ফলিক এসিডের ঘাটতিজনিত এনিমিয়া
* এপ্লাস্টিক এনিমিয়া (অস্থিমজ্জার উৎপাদনক্ষমতা নষ্ট হলে হয়)
* বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অসুখের প্রভাব (যেমন—কিডনি বিকল, লিভার বিকল, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা ইত্যাদি)
* লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যান্সারজনিত কারণে।
* আমাদের দেশে আয়রনের ঘাটতিজনিত এনিমিয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে।
লোহিতকণিকা দ্রুত ভেঙে যাওয়া
* জন্মগত কারণ (যেমন থ্যালাসেমিয়া)
* বিশেষ কিছু ইনফেকশন (যেমন—ম্যালেরিয়া)
* রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জটিলতাজনিত কারণ।
রক্তক্ষরণজনিত
* কৃমি, পেপটিক আলসার, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ওষুধ, পাইলস, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, দুর্ঘটনাজনিত হঠাৎ রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।
লক্ষণ
* দুর্বল লাগা, অবসাদগ্রস্ততা ও ক্লান্তি।
* বুক ধড়ফড় করা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, মাথা ধরা।
* চোখ, হাত ও পা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
* হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরা বা অবশ লাগা।
* মুখে ঘা, খাবার গিলতে অসুবিধা ইত্যাদি।
চিকিৎসা
রোগীর সার্বিক ইতিহাস নিয়ে বিশেষ কোনো রোগের সন্দেহ হলে সে অনুযায়ী পরীক্ষা করতে হবে। এনিমিয়া আসলে কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। সুতরাং যে কারণে এনিমিয়া হয়েছে, তা শনাক্ত করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়াটাই হলো এনিমিয়ার মূল চিকিৎসা। কখনো কখনো পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে অনেক সময় শিরাপথে আয়রন ইনজেকশনও দিয়ে থাকেন চিকিৎসক।
যা খেতে হবে
শরীরে রক্ত উৎপাদনের জন্য আয়রন অতি দরকারী উপাদান। আয়রনসমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো—আনার বা ডালিম, তরমুজ, ড্রাগন ফল, কালো আঙুর, আপেল, বাদাম, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, কচু, ধনেপাতা, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া ও শিম—এদের বিচি, বিট, কিডনি বিনস, ছোলা, ডিম, গুড়, কলিজা, মুরগির মাংস ও পরিমিত পরিমাণে গরুর মাংস।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যান্সার
গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা