ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও বৈষম্য নিরসনের জন্য এবং ডিগ্রী প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফলের ভিত্তিতে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছে ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এ দাবির সাথে যুক্ত হয়েছেন সারাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের ডিগ্রীর সকল ফাইনাল শিক্ষাবর্ষের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।
গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা যুক্ত হতে থাকেন। ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নানা দাবি নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের নিয়মিত, প্রাইভেট ও সার্টিফিকেট কোর্সের সকল সেশনের ছাত্রছাত্রীরা মহুর মহুর স্লোগান দিচ্ছেন ‘এক দফা এক দাবি, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফলের ভিত্তিতে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত ফলাফল অটো পাস চাই’।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আজও অটোপাসের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ডিগ্রী কোর্স সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও গত ৬/৭ বৎসরেও আমাদের ফাইনাল পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপ শেষ হয়নি। ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের হয়রানি ও বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে এবং অটোপাস দিয়ে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা আমাদের সবার জন্য মানবিক কারণে খুবই প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে অবহেলিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কোর্সের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ডিগ্রী থেকে বিসিএস বা ভালো চাকুরির পরিক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য ২ বৎসরের মাস্টার্স করা প্রয়োজন হয়। এতে সর্বশেষ ছাত্র-ছাত্রীর বয়স গিয়ে দাঁড়ায় ২৯/৩০ বৎসর।
রবিউল ইসলাম আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে আমাদের ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের অনেকেই আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। আন্দোলনে আহত-ট্রমায় ভোগা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়া কিভাবে সম্ভব? তাছাড়া দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যার পানিতে অনেক এলাকা তলিয়ে থাকার ফলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আজও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ।
রানা নামের অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বই-খাতা, আসবাবপত্র, কাথা-বালিশ, গৃহস্থালিসহ সকল প্রকার মালামাল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কর্দমাক্ত ভেজা ঘরে বসবাস কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বই-খাতা কিছুই নেই। সব কিছু পানিতে ভেসে গেছে। সব হারিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব।
মো. কামরুল হাসান বলেন, ডিগ্রির নিয়মিত, প্রাইভেট ও সার্টিফিকেট কোর্সের সকল ফাইনাল শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন আন্দোলন ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সবাইকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের ২০১৯-২০ সেশনের রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এমতবস্থায় ফাইনাল পরীক্ষায় কেউ কোনো এক বিষয় অকৃতকার্য হলে ২০২৬ সালে ইম্প্রুভ দিতে পারবে না। এতে নতুন করে ডিগ্রিতে আবারও ভর্তি হতে হবে।
এরকম পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল কার্যক্রম বাকি রয়েছে, বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে মানবিক কারনে দ্রুততার ভিত্তিতে শেষ করে ডিগ্রী প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের সিজিপিএ এর ভিত্তিতে ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের সকল সেশনের ফাইনাল শিক্ষার্থীদের দ্রুত অটোপাস দিয়ে তৃতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। একই সাথে তারা দীর্ঘদিনের সকল প্রকার সেশনজট হয়রানি ও বৈষম্য মুক্ত ডিগ্রী কোর্স বাস্তবায়ন করার জন্য দাবী জানান।
ডিগ্রি বৈষম্য নিরসন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক কামরুল ইসলাম বলেন, ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের সকল সেশনের ফাইনাল শিক্ষার্থীদের অটো পাসের দাবি যৌক্তিক। পেছনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই দাবিসহ ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও বৈষম্য নিরসনের জন্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আমাদের কর্মসূচিও বৃদ্ধি পাবে। আগামী রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) আমাদের কর্মসূচি লং মার্চ টু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রয়োজনে আরও বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
আন্দোলনরত ডিগ্রী শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
এদিকে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রী কোর্সে অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীদের বেশিভাগই নিয়মিত, অনিয়মিত, প্রাইভেট ও সার্টিফিকেট কোর্সের এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। জীবিকার তাগিদে পড়ালেখার পাশাপাশি অনেকেই কর্ম করেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য অনেক সময় নিজেদের কর্ম বা চাকুরিও ছেড়ে দিতে হয়। এসব শিক্ষার্থীরা কর্মব্যস্ত থাকায় তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে। দেশে করোনা মহামারি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, কোটা আন্দোলন হয়েছে। এরই মাঝে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনার বাইরে থাকায় তাদের শিক্ষাজীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।