তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং জমা দেওয়া শেষ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর)। সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ার আশায় নৌকার প্রার্থী হতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১০ কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তারা দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
দুই কর্পোরেশনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলররা বেশি এগিয়ে আছেন। এখানে ৮ জন কাউন্সিলর এমপি হওয়ার লক্ষ্যে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। আর উত্তর সিটির কাউন্সিলরদের মধ্যে ২ জন ফরম জমা দিয়েছেন। এর বাইরে আরও কয়েকজন কাউন্সিলর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে শোনা গেলেও এখনও তাদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কাউন্সিলররা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন কয়েক মেয়াদে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার দল এবং এলাকাবাসীর সমর্থন পেলে আরও বড় পরিসরে মানুষের জন্য কাজ করতে চান তারা।
গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। আর গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয় ফরম জমাদান। ক্ষমতাসীন দল গত চার দিন দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। ৩০০ আসনের বিপরীতে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সভায় চূড়ান্ত হবে কে কোন আসনের নৌকার মাঝি হবেন।
দেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০টি আসন রাজধানী ঢাকায়। এই ২০ আসনে প্রতিবারই প্রভাবশালীরা এমপি হন। এবারও অনেক হ্যাভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী কাউন্সিলরদের মধ্যে ঢাকা-৯ আসন থেকে নির্বাচনের লক্ষ্যে ফরম জমা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান। ঢাকা-১০ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন দক্ষিণ সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবলা, ঢাকা-৭ আসনে জমা দিয়েছেন দক্ষিণ সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান মানিক, একই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আব্দাল আজিজ।
ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন। একই আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন দক্ষিণ সিটির সংরক্ষিত ৫ আসনের (১৩, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড) মহিলা কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলী। ঢাকা-৪ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক এবং একই আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান।
উত্তরে ঢাকা-১৪ আসনে নৌকার এমপি প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান এবং ঢাকা-১১ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন উত্তর সিটির ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম গনি।
কাউন্সিলর থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার প্রত্যাশা এবং দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান মানিক নয়াকণ্ঠকে বলেন, আমি বারবার নির্বাচিত কাউন্সিলর হয়ে এলাকাবাসীর সেবায় নিয়োজিত আছি। আমার এলাকার সাধারণ জনগণ আমার পাশে আছেন। তারা চান আমি যেন এমপি নির্বাচন করে আরও বড় পরিসরে জনগণের সেবা করতে পারি। এবার আমি খুব আশাবাদী— দল থেকে আমি এই আসনে মনোনয়ন পাব। ইতোমধ্যে এলাকায় প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়ে সাধারণ মানুষের খুব সার্পোট পাচ্ছি।
ঢাকা ১৪ আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান নয়াকণ্ঠকে বলেন, আমি আশা করছি— এবার আমি দলীয় মনোনয়ন পাবো। আমি অনেক বছর ধরে এই এলাকার কাউন্সিলর। সেই সুবাদে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমাদের চলাফেরা, সেই সাধারণ মানুষদের সার্পোট পেয়েই আমি সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছি। আশা করছি দল থেকে আমাকেই প্রার্থী করা হবে।
তফসিল অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন প্রয়োজন হবে। কেউ স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত প্রত্যয়নপত্র লাগবে। অবশ্য কেউ অতীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করে থাকলে এই বাধ্যবাধকতা থাকবে না।