মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:২০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
ইসি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে দাঁড়াতে চায় না : সিইসি শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিবাদী দলের নেতাদের সম্পত্তিতে হামলা না করতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান রাজশাহীর ইউনিস্যাবের ১২তম স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলা’ প্রস্তাব করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা বিষয়ে প্রস্তাব করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম বাতিলে হাইকোর্টের রায় সংস্কারের নামে ষড়যন্ত্র চলছে কি না সজাগ থাকতে হবে : তারেক রহমান গেট ভেঙে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে ঢুকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই আসছে ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল শাসন ও বিচারবিভাগের সংস্কার প্রতিটি নাগরিককে স্পর্শ করবে : প্রধান উপদেষ্টা দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ ও ‘রাজধানী মহানগর সরকার’ গঠনের সুপারিশ শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলার রায় ছিল অমানবিক : হাইকোর্ট ব্রিটেনের আদলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ার রূপরেখা বিএনপির ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন ব্যারিস্টার জায়মা রহমান

পলকেই পিছু স্মৃতির হাতছানি : নুসরাত মারিয়ম

নুসরাত মারিয়ম
আপডেট : শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

সেই দিনটা ছিলো ফাগুনের পরশ মাখানো মিষ্টি বাতাসে ছুয়েছিলো অবয়ব মন। বসন্তের ফুলের সুভাষে জগত সংসার ভেসেছিলো আসমান-জমিন। এমন কি অতল সমূদ্র! আহা ঘ্রাণ! ফাগুনের আগুন ঝরা রক্তিম ফুলে কৃষ্ণচূড়ায় কল-কাকলীর তান। এ যেন প্রশান্তময় এক অরোরা ভোর।

শরীর পোড়ানো নয় এ রোদ..
স্নিগ্ধ কোমল পরশে খিলখিলিয়ে উঠলো ধরাধাম। ছুটছিলো খলবল করে ঝরণার আকুল করা লয় তান, নদ-নদী পার হয়ে সমূদ্র মোহনায় চললো, আর ধরলো সুখানন্দের গান।

হঠাৎ অমি তার আদুরে একমাত্র পুত্রের স্কুলের ব্যাগটা নিয়ে বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই কাচ ঘেরা জানালা হতে দৃষ্টির সীমানায় উঁকিঝুঁকি দিলো বিশালতায় ভরপুর গগনে। নীল-আসমানে চোখ রাখার জন্য অমি ব্যাগটা হাতে নিয়ে এগিয়ে জানালার কাছে চললো। ব্যাগের সাথে জানালায় ঝুলানো ডোর বেলের টুং টাং আওয়াজে অমি আনমনে হারিয়ে গেলো দূর অজানায়।

অপলক দৃষ্টিতে নীলাভার পথে চলছে শ্বেত-শুভ্র মেঘের ভেলার দ্বিগবিদিক ছুঁটাছুঁটি। আহ্ নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবলোকনে অমি ভেসে গেলো ছেলেবেলার স্বর্ণালী ছোঁয়ায় ভরপুর স্কুল বারান্দায় সেই মাহেন্দ্রক্ষণে!

একের পর এক স্মৃতি পাতার ঝাপি চললো খুলে করোটির কোটরে । টুং টুং ঘন্টার আওয়াজ অমি কে মুহূর্তেই নিয়ে গেলো তার স্কুলের বারান্দায় ঝুলানো পিতলের ঘন্টার কাছে।

“আহ্ কি মধুময় ক্ষণ
আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা
সদাই বন্ধু প্রিয়জন”

এই তো সেইদিন স্কুল ব্যাগ কাঁধে করে স্কুল যাওয়ার কথা। অমি ছিলো অনেক ডানপিটে আর ভীষণ দুরন্ত চঞ্চল স্বভাবের এক আদুগাদু মেয়ে। বাসায় তার মত শান্ত ভদ্র ইহজগতে দ্বিতীয় কোন শিশু ছিলো কিনা সন্দেহ! মা বড় হয়ে অমি’র কান্ডকারখানা দেখে বিস্মিত হতো প্রায়শ-ই। তুই তো আমার অতি শান্ত একটি আদুরে মেয়ে। এত দুষ্ট হলে কবে হতে? যখন অমি অনার্স ফাইনাল ইয়ার পড়তো তখন তিনি এই প্রশ্ন ছুঁড়তেন।

স্কুলে গিয়ে বেঞ্চে ব্যাগ রেখেই ভোঁদৌড় খেলার মাঠে। স্কুলে গেটে প্রবেশের পূর্বেই প্লান করে ফেলতো স্কুলে মাঠে আজ কোন কোন বান্ধবীদের সাথে সি-বুড়ি, দাড়িয়াবান্ধা খেলবে। তাই সে বাসা হতে একটু আগেই বের হয়ে যেতো স্কুলের পথে। মা তার চাকুরীজীবি। সকাল ৮ টার মধ্যে বের হয়ে যেতো বাসা হতে অন্য উপজেলায় ছিলো তার অফিস।

মাঠের মেইন জায়গাটা সব সময় অমি ও তার দলবল এর ছিলো সি-বুড়ি, দাড়িয়াবান্ধা খেলার জন্য বরাদ্ধ । ঐ জায়গা দখল করার মত সেই স্কুলের কোন ছাত্রীদের সাহস ছিলো না। অমি যেদিন স্কুল off যেতো অসুস্থতায়। তখন অন্যরা হাফ ছেড়ে বাঁচতো ঐ জায়গা খেলার সুযোগ মেলাতে।

ক্লাস শুরু হলেই শুরু হতো সময় গুনন, কখন ৩:১৫ মিঃ ঢং ঢং ঘন্টা বেজে উঠবে টিফিনের জন্য। আর অমনি টিফিন টাইমে অমি ও তার বান্ধবীরা মিলে বেঞ্চে বসে বসে মনের মত কন্ঠ ছেড়ে গান গাওয়া।

ছেলেবেলা মনে হতো কখন বড় হবো? পড়াশুনা শেষে চাকুরী করবো? স্বাধীন মত ঘুরবো? আর আজ গানের লাইনা ভিতর দিয়ে বেজে উঠে…..
মনে পড়ে যায় বন্ধুদের আড্ডা মুখর প্রহর তুমুল উল্লাসে ভরা প্রিয় শহর!!!! কে? কোথায়?কেমন আছে অনেকের কথাই জানে না। হয়তো ব্যস্ত সবাই তার জগত সংসার নিয়ে। হয়তো মেলে না সময় তবুও সেইক্ষণ ফিরে পেতে চায় ফেরারি এ হৃদয়……..

উহ্! কি আশ্চর্য এই ভবের জগত। এটা নেই, ওটা চাই। ওটা পেলে এটা চাই! ইচ্ছে হয় সেই ছেলেবেলা স্কুল জীবন ফিরে পেতে…হইচই করে বান্ধবীদের সাথে ঘুরে বেড়াতে। কিন্তু সেই ফুসরত কোথায়? বন্ধু-বান্ধব বিহীন এই একাকী জীবন ভালো লাগে না তার…..

কি করবে? ভাবতে না ভাবতেই অকস্মাৎ ছেলে দৌঁড়ে এসে হাতটা ধরে বললো, আম্মু তুমি কই হারায়ে গেলে? ছেলের কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলো অমি, ছেলের দিকে তাকায়ে ভাবলো আসলেই ক্ষণিকের তরে কোথায় হারায়ে গেলাম এই আমি! আহা রে জনম, সহস্র বছর বড্ড সাধনায় প্রাপ্তি এ জনম।

এই জীবন আসলেই তার আর ভালো লাগে না। অমি ফিরে পেতে চায় বন্ধুদের আড্ডার হিরন্ময়ক্ষণ গুলো। ঢাকা শহরে অবয়ব পড়ে থাকলেও, ছেলেবেলায় বড় হওয়া ঐ প্রিয় শহরে পড়ে থাকে, থাকে পড়ে তার মনপ্রাণ।

আজ সময়ের ব্যবধানে যার যার জায়গাতে ওরা সবাই এতটাই ব্যস্ত যে, কারো সময় হয় না মুঠো ফোনে কথা পর্যন্ত বলার, নতুবা ইচ্ছে শক্তিটা মরে গিয়েছে নিজ সংসারে পদার্পণ এর সাথে সাথে।

আনন্দ উল্লাস আসলে এভাবে-ই কি হারিয়ে যায়? সময়ের ফাঁকে ফাঁকে চোরাবালি এ জনমের বাঁকে বাঁকে!

লেখক :
ব্যবসায়ী, প্রাক্তন আইন শিক্ষার্থী সেন্ট্রাল ল’ কলেজ, ঢাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর