আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি)। তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ জনকে শপথগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাতে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান। মন্ত্রিসভার সদস্যরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে শপথ নেবেন।
এর আগে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের পাশাপাশি তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
নতুন মন্ত্রী হচ্ছেন যারা
বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন।
এছাড়া লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আবদুস শহীদ, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম, জিল্লুল হাকিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও নাজমুল হাসান পাপন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন।
এর মধ্যে বিদায়ী মন্ত্রীসভায় না থাকলেও এর আগে ফারুক খান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, সাবের হোসেন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর কবির নানক মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
টেকনোক্র্যাট কোটায় ডা. সামন্ত লাল সেন ও স্থপতি ইয়াফেস ওসমানকে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ইয়াফেস ওসমান বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ১১ জন
নতুন মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ১১ জন। তারা হলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
অন্যদের মধ্যে সিমিন হোসেন রিমি, মহিববুর রহমান, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রুমানা আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আহসানুল ইসলাম (টিটু) প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন।
১৪ মন্ত্রী, ১২ প্রতিমন্ত্রীর বাদ নতুন সরকারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নতুন যে মন্ত্রিসভা ঘোষিত হয়েছে তাতে একাদশ সংসদের ১৪ জন মন্ত্রী ১২ জন প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী বাদ পড়েছেন। বুধবার রাতে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
বাদপড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে তিন জন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হয়েছেন তিন জন। এই ছয় জনের কেউ নেই নতুন মন্ত্রিসভায়।
বাদপড়ার তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি বাদ পড়েছেন প্রতিমন্ত্রীও। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়েও একই ঘটনা ঘটেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি বাদ পড়েছেন উপমন্ত্রী। বাদপড়া মন্ত্রীদের সবাই গত ৭ জানুয়ারির ভোটে জিতে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
যেসব পূর্ণ মন্ত্রী বাদ
মন্ত্রিসভার নতুন তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না।
বাদ পড়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বীর বাহাদুর উশৈ সিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদকেও নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী যারা বাদ
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসাও থাকছেন না নতুন সরকারে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবার জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। ফলে তাদের বাদ পড়াটা অনেকটা অনুমেয় ছিল।
মনোনয়ন পেয়েও ভোটে হেরে যাওয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. স্বপন ভট্টাচার্য্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও ডাক পাননি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমও ডাক পাননি এবার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর মধ্য দিয়েই নতুন সরকারের পথচলা শুরু হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন হচ্ছে। বঙ্গভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনেও সম্মতি দিয়েছেন।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়া হয়েছে বলেও গণ্য করার কথা বলা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে।
বুধবার সকাল ১০টায় দ্বাদশ সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ নবনির্বাচিত ২৯৮ জন এমপি। তার আগে এমপি হিসেবে প্রথমে শপথগ্রহণ করেন বর্তমান সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী।
এরপর স্পিকার হিসেবে তিনি শেখ হাসিনাসহ অন্য সংসদ সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র হিসেবে বিজয়ীরাও এদিন শপথগ্রহণ করেছেন।
শপথগ্রহণের পর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সংসদ নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। এ নিয়ে মোট পঞ্চমবারের মতো সংসদ নেতা হলেন তিনি।
একাদশ সংসদে মতিয়া চৌধুরী ছিলেন সংসদ উপনেতা। এবারও তাকে একই পদে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর গত সংসদে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করা নূর-ই-আলম চৌধুরীকে একই পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বুধবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ গঠিত হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি বাকি ছিল। এদিন সন্ধ্যায় নতুন প্রধানমন্ত্রীও নিয়োগ পেয়েছেন। এখন বাকি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন।
নতুন মন্ত্রিসভার শপথ বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে শপথ নেবেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন।’
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন নতুন মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। এ উপলক্ষে প্রায় এক ৪০০ জন অতিথিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে বঙ্গভবন।
গত ৭ জানুয়ারি ২৯৯টি আসনে ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগ ২২২টি, জাতীয় পার্টি ১১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি করে আসন পেয়েছে। কল্যাণ পার্টি অন্য একটি আসনে জয় পেয়েছে।