বাংলাদেশ অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীল গ্রাম হলো, শহর ডিজিটাল থেকে স্মার্ট, স্যাটালাইট যুগে প্রবেশ, অকল্পনীয় মেট্রোরেল, কর্ণফুলী ট্যানেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দৃশ্যমান। শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা দেশীয় খুঁটি মজবুত করতে ব্যস্ত।
বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি যে কয়বার ক্ষমতায় এসেছে, তার মূল কারণ ছিল ষড়যন্ত্র। এবারও কি সেদিকেই নিমজ্জিত হচ্ছে! আমরা এর আগে দেখেছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যতবার হেরেছে, ততবার ষড়যন্ত্রকে হাইলাইট করে বক্তব্য দিয়েছে তারা কেন ষড়যন্ত্রকে রুখতে পারেননি, তা নিয়ে গবেষণা খুব কমই হয়েছে। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের কথা। ওই নির্বাচনে দেশের সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরে গিয়েছিল। তার পর দেশে কী হয়েছিল, তা তুলে ধরা নিষ্প্রয়োজন বোধ করি এ জন্যই যে, ওই দুঃসময়ে কজন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীর বাসায় হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।
পরিসংখ্যানিক হিসাবে দেখা যায়, ৯৯ শতাংশ স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী সেই জঘন্য লোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তারা এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। এই দায়ভার কার? আমার মনে পড়ে, আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর কারণ অনুসন্ধানে যে বিষয়গুলো সামনে এনেছিল, তার মধ্যে ১ নম্বরে ছিল দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। যারা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত ছিল, দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ কী ব্যবস্থাই বা নিয়েছে। জরিপে উঠে আসা অন্যতম একটি পয়েন্ট ছিল দলীয় কোন্দল বা অসন্তোষ। দৃশ্যত আওয়ামী লীগ তাদের বিপক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সময়েও দলীয় কোন্দল বা অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করেছে, যার খেসারত দিতে হবে।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এ নির্বাচন অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হেরে গেলে ক্ষমতায় আসতে পারে সাম্রাজ্যবাদীদের আজ্ঞাবাহী স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে এটি মনে হয়, দেশে এক অধিনায়ক আছেন, যার নাম শেখের বেটি হাসিনা। তিনি একাই সামাল দিচ্ছেন। মৃতুকে ভয় করলে জীবন যে মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়, তার প্রমাণ বারবার দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দৃঢ় মনোবল ও অদম্য সাহসিকতার সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে গোটা বিশ্বকে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশ কারও তাঁবেদারি রাষ্ট্র নয়, আমরা কারও হুমকি-ধমকিতে ভয় পাই না।
জীবন বাজি রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী, দেশের জনতা ভোট দিতে প্রস্তুত। সমস্যা হলো আসনভিত্তিক নির্বাচন সাধারণ জনতা প্রতীকের পাশাপাশি প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা, তার আচার-ব্যবহারসহ নানাবিধও দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে থাকে। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা/জনপ্রতিনিধি তাদের অগ্রহণযোগ্য কথাবার্তা, দুর্দিনের নেতাদের বঞ্চিত করে হাইব্রিডদের প্রশ্রয় দেওয়া, ভোটারদের খোঁজখবর না রাখাসহ নানাবিধ কারণে জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে।
আজ বাংলাদেশের মানুষ হাসিনার কল্যাণে দেশ ও বিদেশে আলোচিত, প্রশংসিত ও সম্মানিত। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, তিনি আদৌ কি বঙ্গবন্ধুর পাশে থাকা একজন তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী বা কামারুজ্জামানের মতো নেতা পেয়েছেন? তারা বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিয়ে আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা বিপরীত পেক্ষাপট লক্ষ করছি। শেখ হাসিনা নিজেই জীবন বাজি রেখেছেন দেশ, দল ও দেশের জনতাকে বাঁচাতে।
লেখক :
সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।