মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৬ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িক কারাগার হিসেবে ঘোষণা তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য বিকৃত করে অপপ্রচার শনাক্ত বাংলাফ্যাক্টের ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে সরকারের সতর্কতা পিআর ইস্যুটি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে : মির্জা ফখরুল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ১৬ অক্টোবর আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক : তারেক রহমান পদার্থে নোবেল পেলেন ৩ গবেষক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে : চিফ প্রসিকিউটর আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা যেকোনো সময় তুলে নেওয়া হতে পারে : জিটিওকে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আজ রাজনৈতিক দলগুলো চাইলেই এক মাসে ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ বাস্তবায়ন সম্ভব : মাহফুজ আলম শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে: ডিএমপি কমিশনার দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশে পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় ৭১ হাজার পুলিশ মোতায়েন ব্যাংকের টাকা লোপাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর কন্যার যোগদান

পথে বসবেন বিনিয়োগকারীরা, বেকার হবেন সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:৫৭ অপরাহ্ন
প্রতীকী ছবি

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগকারীরা পথে বসে যাবেন। একইসঙ্গে বহু সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়বেন বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ‘ওয়ান মিডিয়া, ওয়ান হাউস’ ধরনের স্লোগানে ‘টার্গেট’ করে এক গ্রুপের একাধিক মিডিয়া বন্ধের যে দুরভিসন্ধি—এটা কমিশনের কার্যক্রমে সুস্পষ্ট হয়েছে। কমিশন এমনভাবে বলছে, যেন বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রথম সারির কয়েকটি মিডিয়াকে ‘ঘায়েল’ করাই মূল লক্ষ্য! দেশের অন্যতম শীর্ষ ও বৃহৎ পাঠকভিত্তির এই গ্রুপে বিপুলসংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

কমিশনপ্রধানের ‘নুন খাওয়া’ প্রতিষ্ঠানের পছন্দ নয় বলে ওই গ্রুপের মিডিয়া বন্ধের এই হটকারী প্রস্তাব দেওয়া মানে দেশের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়। কমিশনের প্রস্তাবে এক গ্রুপের একাধিক মিডিয়া বন্ধের এই যে চক্রান্ত, তা গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরানো বা বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম তৈরির লক্ষ্য নয়; বরং হাতে ধরে মিডিয়া বন্ধের নীলনকশা। হাজার হাজার সংবাদকর্মীকে বেকার করে তাঁদের পথে বসানোর ষড়যন্ত্র।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য ব্যবসার মূল লক্ষ্যই থাকে লাভ বা মুনাফা।

আর গণমাধ্যমের মূল লক্ষ্য সেবা। চাওয়ার মধ্যেই বিস্তর তফাত। একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি যৌক্তিক। কিন্তু সেবাধর্মী এবং বলতে গেলে জেনেশুনে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গণমাধ্যমকে পুঁজিবাজারে আনার প্রস্তাবও অবাস্তব।
কারণ বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। দেশের লাভজনক হাজারো প্রতিষ্ঠান এখনো সেখানে তালিকাভুক্ত হয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানও বহু বলার পরও সেখানে যায়নি। এ বাজারে ফড়িয়া, দালাল সিন্ডিকেটের যে দৌরাত্ম্য, তা পুঁজিবাজারকে ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে ঠেকিয়েছে। এমন একটি বাজারে মিডিয়ার মতো স্পর্শকাতর একটি উদ্যোগকে নিয়ে গিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করার আরেকটি চক্রান্ত।
এতে মিডিয়াটিও নির্মূল হয়ে যাবে, বিনিয়োগকারীরাও পথে বসবেন।আরেক প্রস্তাবে সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার যে কথা বলা হয়েছে, সেটি ঠিক আছে। কিন্তু সাংবাদিকদের সারা দেশে একই বেতন স্কেল হবে। যোগদানের প্রথমেই বিসিএসের নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মতো হবে বেতন স্কেল। এটিও অবৈজ্ঞানিক সুপারিশ। সারা দেশের সংবাদকর্মীরা কিভাবে প্রধান কার্যালয়ের সংবাদকর্মীর সমমানের হবেন? প্রধান কার্যালয়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে একেকজন নিয়োগ পান। তাঁদের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা প্রতিযোগিতামূলক। একেক বিষয়ে একেকজন সাংবাদিকের অভিনবত্ব, সংবাদের ‘সোর্সের’ সঙ্গে গভীর সম্পর্ক, পেশাদারি—এসবই একজন সাংবাদিকের মূল শক্তি। তাঁর চাহিদাও বেশি। এটা সর্বত্র এক নয়, সম্ভবও নয়। এ ধরনের সাংবাদিকের সুযোগ-সুবিধা প্রতিযোগিতামূলক।

আর ঢাকার বাইরে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা নিজেদের আবাসস্থলের পাশে অন্য কোনো পেশায় থেকে এ পেশায় কন্ট্রিবিউট করেন। এটাই বাস্তবতা। চাইলেই রাতারাতি তাঁদের প্রধান কার্যালয়ের সমমানের ও মর্যাদায় উন্নীত করা অবাস্তব। পেশাদারি ও দক্ষতার বিবেচনায় কেন্দ্রের সঙ্গে প্রান্তের কর্মীদের সমান কাতারে আনা দীর্ঘ সময় ও প্রক্রিয়ার বিষয়।

এটা কমিশন বললেই আর একটি পরিপত্র জারি করলেই বাস্তবায়ন হয়ে যাওয়ার কোনো পরিস্থিতি নেই। এতেই বোঝা যায়, কমিশনপ্রধান বিদেশে থেকে দেশের বাস্তবতা না বুঝেই কাল্পনিক এমন হটকারী প্রস্তাব দিয়েছেন। এমন প্রস্তাব দেশের একটি হাউসও বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে।

দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। লাভজনক ব্যবসাই এখন লোকসান গুনছে। টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। লাখ লাখ লোক চাকরি হারাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসান জেনেও গণমাধ্যম সাংবাদিকদের বেতন দিয়েও দেশের সেবা করে যাচ্ছে। পুরনোটা চালাতেই হিমশিম অবস্থা। কেউ নতুন বিনিয়োগেও আসছে না।

সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন গণমাধ্যমের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ হবে—ছোট ছোট সংবাদমাধ্যমকে গলা টিপে হত্যা করা। কিভাবে পেশাদার সাংবাদিক তৈরি করা যায়, কিভাবে একটি মানসম্পন্ন মিডিয়া তৈরি করা যায়, কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে বিদ্যমান একটি মিডিয়া হাউস আরো দক্ষ ও পেশাদার হবে, বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতা করতে পারবে—তার জন্য সরকার কী করতে পারে, নিয়ন্ত্রকরা কী করতে পারেন—প্রস্তাব হতে হবে এসব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর