পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে তাকালে এখন তাদের লজ্জা হয়। সম্প্রতি ডনের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, আগের দিন করাচিতে সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ নিয়ে এমন কথা বলেন শাহবাজ শরিফ।
বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতি প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, সে সময় পূর্ব পাকিস্তানকে দেশের বোঝা মনে করা হতো। কিন্তু তারা শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে। মতবিনিময় সভায় শাহবাজ শরিফ বলেন, আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম যখন আমাদের বলা হতো যে এটি আমাদের কাঁধে একটি বোঝা। আজ আপনারা সবাই জানেন, সেই বোঝা কোথায় পৌঁছেছে বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে।
১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ এখন আর্থ-সামাজিক খাতের প্রায় সব সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মতবিনিময় সভায় শাহবাজের বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তরপর্ব হয়। সেখানে ব্যবসায়ীরা শাহবাজের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের প্রশংসা করে বেশ কয়েকটি দাবি জানান। প্রত্যাশিত ফল অর্জনের জন্য বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণেরও প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তানের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তারপরে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক উন্নতি হতে থাকে বাংলাদেশে। অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলেও স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সে রকম সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটিকে বাস্তবায়নে আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সূচকের বিভিন্ন স্তরে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে এগিয়ে আছে। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে বাংলাদেশ যোগ্যতার জায়গা থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে। মাথাপিছু আয়ের সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। গত অর্ধশতাব্দীর কিছু বেশি সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭১ গুণ।
বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রায় বিগত ১৫ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে এবং জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে তিনি কাজ করছে সরকার। শেখ হাসিনা যে ইতিহাসের পথে হেঁটেছেন, সমসাময়িক ইতিহাসে কাউকে খুব একটা এভাবে দেখা যায় না। সবাই জানতেন শেখ হাসিনা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। ইডেন গার্লস কলেজের ভিপি ছিলেন। ছয় দফা আন্দোলনের সময় রাজপথে ছিলেন। তাই ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিলে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রবাস জীবনযাপনকারী শেখ হাসিনাকেই বানানো হলো দলের সভাপতি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়েছিলেন তাঁর অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল চালু করা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক বেড়েছে।
১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে একটি জনপ্রিয় দল হিসেবে ক্ষমতায় এনেছেন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছিলেন তা হলো বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার এবং পরে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। আর সেই সুযোগ এসেছিল বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। শেখ হাসিনা সবচেয়ে দুঃসময়ে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ, বিকাশ এবং মুক্তির লক্ষ্যে অগ্রণী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য তার বিকল্প নেই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এখন আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে এবং তিনি জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি, সাহস, মনোবল এবং দৃঢ় নেতৃত্ব বিশ্বকে অবাক করে দেয়। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ একটি ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে এবং ২০৪১ সালে একটি ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দ্রুত চলাচলের মাধ্যম হয়েছে। উদ্বোধন করা হয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল। মহাকাশেও বাংলাদেশ তার অবস্থান ঘোষণা করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন দুটিই উন্নয়নের মাইলফলক। ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে দেশের জনগণকে কোভিডের টিকা দেওয়া হয়েছে এবং সফলভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা করে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের একটি বড় দিক হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে রূপ পেয়েছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু থেকে শুরু করে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে মনে করা হয় উন্নয়নের রোল মডেল, এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে। আত্মমর্যাদা এবং নিজের টাকায় পদ্মা সেতু।
শেখ হাসিনা কেবল বাংলাদেশকে উন্নত এবং অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেননি, বাংলাদেশকে একটি আত্মসম্মান মর্যাদায় নিয়ে গেছেন। দারিদ্র্যের হার হ্রাস ৪০ থেকে ১৮ তে নেমেছে। সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতিদান, মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন ও চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকায়ন। ১৭ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে, বিনামূল্যে ৩১ প্রকার ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নানাভাবে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। পাশাপাশি হাতে নেওয়া হয়েছে ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবে-সেই পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশে সব কাজ, সম্পাদন করা হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেখানে প্রতিটি নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য কাজ চলছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীর হিসেবে মর্যাদা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭টি পরিবারের ২৭ লাখ মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়ন তার সরকারেরই অবদান। আমাদের একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এটিই বর্তমান নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এ দেশের মানুষের কান্ডারি, শেষ ভরসাস্থল ও আশ্রয়স্থল।
আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, এ দেশ আমাদের। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। জনগণের সমর্থনের কারণে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবেই এগিয়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন এক নাগাড়ে। বিশ্বনেত্রীর হাত ধরেই এ দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো ঝকঝকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে অল্প সময়েই। একমাত্র শেখ হাসিনাই পারবেন উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। সন্তানের থেকে বেশি মমতায় ভালোবেসেছেন দেশকে। পিতার অসমাপ্ত কাজ যে সমাপ্ত করতে হবে। এভাবেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
প্রাবন্ধিক ও গবেষক