প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা হলো মব জাস্টিস (গণপিটুনি)-এর মত ঘটনা কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না। কেউ অপরাধ করলে আইনানুযায়ী তার বিচার হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘মব জাস্টিসের বিষয়ে সরকারের অবস্থান খুব স্পষ্ট। কোনোভাবে হতে দেওয়া যাবে না। মাজার ও মন্দিরে হামলা বা কোন ব্যক্তি আক্রোশের কারণে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘কেউ অপরাধ করে থাকলে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই’ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছেন, জনগণ তাদের বিচার করবে না। তাদেরকে আইনের আওতায় সোপর্দ করতে হবে। কারোর মানবাধিকার লুণ্ঠিত হোক, সেটা আমরা চাই না।
তিনি বলেন, আইন নিজস্ব গতিতে তাদের বিচার করবে। জনগনকে শুধু এটুকু খেয়াল রাখবে, দোসররা যে কোনোভাবে পার ন পেয়ে যায়।
যারা আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের সাথে কোন ধরনের বেইমানি যেন না হয়। মব জাস্টিসের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম আরও বলেন, সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার বিষয়ে সরকারের কোন দিক-নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করতে দেওয়া-না-দেওয়ার বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট কোনো অবস্থান নেই। তবে ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানানো যাবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশে একটা ঐকমত্য আছে। এমনকি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যারা করেন তারাও এব্যাপারে একমত।’
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল পরিচালনা দু’টি আলাদা বিষয় বলে তিনি ব্যাখ্যা দেন।
দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। সবার মতামত গ্রহণ করে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন। তবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ যে অপরাজনীতি করেছে সেই রাজনীতি যেন ক্যাম্পাসে ফিরে না আসে সেটা আমাদের অঙ্গীকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষার্র্থীদের আলোচনায় সরকারের তরফ থেকে আহত ও নিহতদের বিচারের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা উঠে এসেছে। একটি ফাউন্ডেশন গঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, এর মাধ্যমে শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহত পরিবারকে পূর্ণবাসন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আহত ও নিহতের তালিকা তৈরি করতে খুব ভালভাবে কাজ করছে সরকার। এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। প্রথমদিকে ছাত্ররা ছিল পরে দেশব্যাপী সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়। এজন্য এই তালিকা অনেক লম্বা হচ্ছে।
তিনি জানান, অনেকেই পুলিশি ঝামেলার কারণে ময়না তদন্তের প্রক্রিয়ায় যাননি। ফলে সবার তথ্য সংগ্রহ করতে একটু বেক পেতে হচ্ছে। অনেকেই জানাযার নামাজ তাড়াতাড়ি করেছেন পুলিশি ঝামেলার এড়াতে। প্রাথমিক একটি তালিকা হয়েছে। এখন ছাত্ররা করছেন, অনেকে প্রাইভেটলি করছেন। সবগেুলো তালিকা পাওয়ার পর সম্মনিত একটি তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানান।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণহারে মামলা হচ্ছে এমন উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে মাহফুজ আলম বলেন, গণমামলা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে প্রত্যেকটি মামলার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া মেনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। আজ সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ১৫০ জন ছাত্র প্রতিনিধি সরকার প্রধানের সাথে মতবিনিময় করেন।