রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য কী এবং এই যুদ্ধ থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে লাভবান হতে পারে— এসব ইস্যুতে যদি বাইডেন প্রশাসন সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা না দেয়, তাহলে ইউক্রেনে অর্থ সহায়তা সংক্রান্ত কোনো বিল আর অনুমোদন করবে না মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার এবং রিপাবলিকান পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা মাইক জনসন রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ইস্যুতে নিম্নকক্ষের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
‘কেন আমরা অর্থ দেবো? সেখানে (ইউক্রেন) আমাদের পরিকল্পনা কী? স্ট্র্যাটেজি কী? এই যুদ্ধের পরিণতি কী হবে? যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানিত করদাতারা, যারা আমাদের এই অর্থনীতি সচল রাখছেন— তারা যদি অপচয়ের অভিযোগ তোলেন— আমরা কী জবাব দেবো,’ সাক্ষাৎকারে বাইডেন প্রশাসনের উদ্দেশে এসব প্রশ্ন তোলেন মাইক জনসন।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকটে ভুগছে ইউক্রেন। এই সংকটের কারণে তাদের সামরিক অপারেশনও কাটছাঁট করতে হচ্ছে। গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা প্রদান বাবদ অর্থ সহায়তা বরাদ্দের অনুমোদন চেয়ে কংগ্রেসে একটি বিল পাঠিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন, কিন্তু এখনও সেটির অনুমোদন দেয়নি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস।
সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে হাউস স্পিকার বলেন, ‘এই যুদ্ধে আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী— তা অবশ্যই হোয়াইট হাউসকে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। কেবল তাহলেই আমরা বিলটি অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করতে পারি।’
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ঋণের চাপে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বর্তমানে ব্যাপক চাপে রয়েছে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘বর্তমানে ফেডারেল সরাকারের ঋণের বোঝা ঠেকেছে ৩৪ লাখ কোটি ডলারে। এই ঋণ কীভাবে শোধ হবে, আমরা এখনও জানি না।’
‘আমরা যা বলতে চাইছি, তা হলো— সবকিছু একটা যৌক্তিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা উচিত এবং কেউই জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। জনগণ, যাদের করের টাকায় এই দেশ চলছে— অবশ্যই তাদের কাছে আমাদের জবাব দিতে হবে।’
২০১৫ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে স্বাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেনের তদবিরের জেরে কয়েক বছর ধরে টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতে রুশ বাহিনীকে নির্দেশ দেন পুতিন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর অস্ত্র ও অর্থ সহায়তায় যুদ্ধের শুরুর দিকে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও বর্তমানে বেশ চাপে রয়েছে ইউক্রেন। ইতোমধ্যে দেশটির প্রায় এক চতুর্থাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে চলে গেছে।
এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনে ১ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।