বিএনপি ইসরাইলী-মার্কিনীদের মত দেশে সাংবাদিকদের উপর ও হাসপাতালে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক নেতা মনজরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের সকল ক্ষয়ক্ষতির দায় বিএনপিকে নিতে হবে।
বিএনপি’র আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও ও পেশাগত দায়িত্ব¡ পালনকালে সাংবাদিকদের উপর হামলা, পুলিশ হত্যাসহ প্যালেস্টাইনে ইসরাইলি – মার্কিনী বর্বরতায় নারী, শিশু, সাংবাদিক তথা গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৩০ অক্টোব)র বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাস্টিন ফর জার্নালিস্টের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মনজরুল আহসান বুলবুল আরও বলেন, জাস্টিস ফর জার্নালিষ্ট আয়োজিত আজকের প্রতিবাদ সভা বিশে^র সকল নিপিড়িত মানুষসহ সাংবাদিকদের প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি। জাস্টিস ফর জার্নালিস্টের এই প্রতিবাদ সভাটি ফিলিস্তিনের নিহত সাংবাদিকসহ সকল সাংবাদিকের কণ্ঠের সাথে একাত্ব হয়েছে।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে নানান প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও সেখানকার সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্বপালন করে যাচ্ছেন, এসময় সকল প্রতিকুল অবস্থায় দেশের সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের আহবান জানান তিনি। পেশাগতদায়িত্বপালনের সময় নিজের জানমালের নিরাপত্তার দিকে সর্তক থাকতে বলেন।
মনজরুল আহসান বুলবুল বলেন, বিএনপির সাংবাদিক পিটিয়ে ক্ষতিপুরণ দেয়ার ইতহাস রয়েছে, ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে বিএনপির সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক পিটিয়ে জরিমানা দিয়েছিলো বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিএনপি জামাত যে ভাবে সাংবাদিক পিটিয়ে, পুলিশ হত্যা করে, হাসপাতাল ভাংচুর করে তাদের চরিত্রের বর্হিপ্রকাশ ঘটিয়েছে- এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখে আপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করা। সেই সাথে তিনি আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে গণমাধ্যমের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরলেও বিএনপি তার নির্বাচনী ইস্তেহারে গণমাধ্যম সর্ম্পকে কোন কথা বলে নাই। বিএনপি জামাত জন্মগত ভাবেই স্বাধীন সাংবাদিকতার বিপক্ষে।
২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে সাংবাদিকদের উপর নিপিড়ন নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছিলো। তাদের আচরণে সাংবাদিক বান্ধব চরিত্র খুঁজে পাওয়া যায় না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাব সাধারন সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার পরিণতি ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিক সমাজ জেগে উঠলে তার পরিণতি থেকে কেউ রক্ষা পায় না। তিনি সাংবাদিকদের ওপর হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে প্রকাশ্য দিবালোকে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক কর্মসূচি কভার করতে গিয়ে ৩০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন উল্লেখ করে শ্যামল দত্ত বলেন, বাংলাদেশে ওইদিন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেল। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মসূচি কভার করার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, প্রধান বিচারপতির বাসায় কখনো হামলা হয়নি। কখনো হাসপাতালে আক্রমণ হতে দেখেনি। কখনো একসঙ্গে গণমাধ্যমের ওপর এত বড় হামলা হতে দেখিনি। এ হামলা যে অত্যন্ত পরিকল্পিত ছিল তা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও জানতেন জানিয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, ২৮ তারিখ যে সহিংসতা হবে, বিএনপির পক্ষ থেকে পিটার হাসকে এ ধরনের আভাস দেয়া হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার খবর পিটার হাসদের কাছেও ছিল। দশ দিন আগে পিটার হাসের সঙ্গে এক নৈশভোজে কথোপকথনে বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। ফলে যারা বলে এই কর্মসূচিতে হামলা আকস্মিকভাবে হয়েছে, এটা ভুল। বিএনপি-জামায়াত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বললেও গতকাল দেখা গেছে সহিংসতার মাত্রা কোথায়। ইসরায়েল গাজায় হাসপাতালের ওপর হামলা চালায়, আর জামায়াত-শিবির বাংলাদেশে হাসপাতালের ওপর হামলা চালায়।
ডিইউজের সহ সভাপতি মানিক লাল ঘোষ বলেন সাংবাদিকদের ওপর নারকীয় হামলার ৪৮ ঘন্টা পার হয়ে যাবার পর ও বিএনপির কোন শীর্ষ নেতার এজন্য দু:খ প্রকাশ না করার ঘটনা প্রমান করে দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছে কর্মীরা। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, এবং পুলিশ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা, হাসপাতালে হামলা, পুলিশ বক্সে অগ্নি সংযোগ করে বিএনপি পুরানো সন্ত্রাসী চিত্র আবারও জাতির কাছে তুলে ধরেছে। বিএনপি ও ইসরাইলের হামলার স্টাইল ও লক্ষ্যবস্তু এক। জিয়াউর রহমানের মতো একজন খুনীর হাতে গড়ে ওঠা বিএনপির কাছে এর চেয়ে ভালো আশাও করে না দেশবাসী।
ইসরাইল ও বিএনপির মদদদাতা ও প্রভু এক উল্লেখ করে মানিক লাল ঘোষ বলেন নিরীহ ফিলিস্তিনীদের পাশে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অবস্থান পরিস্কার। ইতোমধ্যে তার নির্দেশনায় ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছে। দেশের সকল মসজিদ, মন্দির সহ সকল উপাসনালয়ে নিহত ফিলিস্তিনীদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়েছে। অথচ ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বিএনপির নিরবতা নানামুখী প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জাস্টিস ফর জার্নালিস্টের কো- চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় , ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি কুদ্দুছ আফ্রাদ, ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি কাজী রফিক।
জাস্টিস ফর জার্নালিস্টের মহাসচিব শাহিন বাবুর সঞ্চনালয় অন্যান্যের মধ্যে , বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ন মহাসচিব শেখ মামুনুর রশীদ , নির্বাহী পরিষদ সদস্য শেখ নাজমুল হক সৈকত,, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, ঢাকা সাংবাদিক পরিবার বহুমূখী সমিতির সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবু, সাব এডিটর কাউন্সিলের সাবেক সাধারন সম্পাদক শাহজাহান মিয়া, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জীবন, বিশিষ্ট সমাজসেবী সৈয়দা রাজিয়া মুস্তফা এবং আয়োজক সংগঠন জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট এর চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান বাবু বক্তব্য রাখেন।