ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ৬টি নৌকার মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। এসব আসনে সম্ভাবনা রয়েছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার। কেননা, দলের নেতারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। প্রচার-প্রচারণা শেষে স্বতন্ত্ররা নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও শঙ্কা জানিয়েছেন শান্তিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র নিশ্চিতের বিষয়ে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা জেলা ও মহানগরে ২০টি আসনে ভোটের মাঠে লড়ছেন ১৫৬ জন। এই আসনগুলোতে সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৩ জন করে প্রার্থী রয়েছেন। ঢাকা-১৮ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়ে একটি বাদে ১৯টিতে প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নৌকার পরে প্রার্থীর সংখ্যায় এগিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আম প্রতীকের ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। দলটি প্রার্থী দিয়েছে ১৬টি আসনে।
লাঙল প্রতীকের জাতীয় পার্টি ১৪টি, সোনালী আঁশ প্রতীকের তৃণমূল বিএনপি ১২টি, ছড়ি প্রতীকের সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ১২টি, টেলিভিশন প্রতীকের বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ১১টি, ডাব প্রতীকের বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে ৬টি আসনে। সবমিলিয়ে ২০টি আসনে ভোটের মাঠে লড়ছে ১৮টি রাজনৈতিক দল।
এতো গেলো প্রার্থী তালিকায় এগিয়ে থাকা দলগুলোর হিসেবে-নিকেশ। এর বাইরে আছে কিছু সমীকরণ। সেই সমীকরণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছেড়ে দেয়া আসন বাদে ১৯টির মধ্যে ১৪টিতেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চিন্তামুক্ত। এই আসনগুলোতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই ‘নির্ভার’ নৌকার মাঝিরা। বাকি পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা তুমুল। কেননা, এই পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের নেতারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
ঢাকা-৪ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এ আসনে লড়ছেন গত দুবারের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। শ্যামপুর-কদমতলী এলাকার এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব আওলাদ হোসেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন হাজারের কম ভোটের ব্যবধানে আবু হোসেনের কাছে হেরেছিলেন। ফলে নৌকা-লাঙ্গলের লড়াই জমিয়ে দিতে পারেন ট্রাক প্রতীকের আওলাদ।
ঢাকা-৫ আসনে সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর পরিবর্তে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্নাকে। ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকার এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। ঢাকা দক্ষিণের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান এবং ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। মশিউরের বাবা হাবিবুর রহমান মোল্লা এ আসন চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন।
ঢাকা-১৪ আসনে সবচেয়ে বেশি পাঁচ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে সাবিনা আক্তার তুহিন দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
ঢাকা-১৮ আসনেও তৈরি হয়েছে কিছুটা জটিল সমীকরণ। জাতীয় পার্টির শেরিফা কাদেরের জন্য ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আছেন নির্বাচনে। ঢাকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আসনে লড়ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক খসরু চৌধুরী প্রচারণার মাঠে ছিলেন সমানে সমান। অন্যদিকে, শেরিফা দল-মতের ঊর্ধ্বে সবার ভোট প্রত্যাশা করলেও নৌকার ভোটারদের কতটা টানতে পারবেন তা-ই নির্ধারণ করে দেবে জয়-পরাজয়ের হিসাব।
ঢাকা-১৯ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী। নির্বাচনে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন নৌকার টিকিট না পাওয়া তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ। মুরাদ জং ২০০৮ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। সাভারের এ নির্বাচনী এলাকায় আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।
ঢাকা-২০ ধামরাই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মালেক ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছ হোসেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে নিঃসন্দেহে। বিগত দিনের প্রচার-প্রচারণার মাঠও ছিলো জমজমাট।